Saturday, September 23, 2023
HomeTop News'নিঝুমপুরী' দিল্লিতে জি-২০' চাঁদের হাট, বাজার বন্ধের নির্দেশে ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা  

‘নিঝুমপুরী’ দিল্লিতে জি-২০’ চাঁদের হাট, বাজার বন্ধের নির্দেশে ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা  

প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান নামাতে সফল হয়েছে ইসরো। অন্ধকারাচ্ছন্ন চাঁদের এই অংশে প্রথমবার পা রাখল ভারত। জি-২০ আবহে রাজধানী দিল্লিও অনেকটা চাঁদের মতন হয়ে উঠেছে। তার একদিকে আলো, আর অন্যদিকে অন্ধকার। শনিবার ৯ সেপ্টেম্বর দিল্লির প্রগতি ময়দানে বসতে চলেছে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আসর৷ শুক্রবার জি-২০তে অংশ নিতে যখন দেশ-বিদেশ থেকে একের পর এক রাষ্ট্রনেতারা পা রাখলেন শাহী মসনদে, আলোয় আলোয় ভরে উঠল চারপাশ। অন্যদিকে তখন অঘোষিত কারফিউ। চাপা অন্ধকার, নিস্তব্ধতা দেখা দিল সমগ্র দিল্লি জুড়ে। দিল্লি নয়, যেন চাঁদের দক্ষিণ মেরু, আলো বা প্রাণ কোনওটাই এসে পড়েনি এখনও পর্যন্ত।

শুক্রবার রাজধানীর রাস্তায় দেখা মিলল না বাস অটো বা ট্যাক্সির৷ মাঝেমধ্যে দু একটি প্রাইভেট কার চোখে পড়লেও ডিটিডিসির বাস সার্ভিস এদিন কার্যত হয়ে রইল অদৃশ্য। মোটের উপর দিল্লি জুড়ে সক্রিয় হয়ে রইল শুধুই মেট্রো রেল, তাও তাতে চোখে পড়ল শূন্য কামরার সারি। রাস্তায় দেখা নেই জনমানসের৷ শুক্রবার দিল্লির বিভিন্ন মোড়ে জুম্মার নামাজেও দেখা গেল না ভিড়। বন্ধ হয়ে রইল সব দোকানপাট, দপ্তর। দিল্লির অলি গলিতে তখন শুধুই কেন্দ্রীয় রক্ষীদের সশস্ত্র প্রহরা। সবকিছুই অদ্ভুত রকম থমথমে, শান্ত, নির্বাক।

এককথায় দিল্লিকে এমন দমবন্ধকর নিঝুমপুরী হয়ে উঠতে দেখা যায়নি বহুদিন। ২০২০ সালের কোভিড লকডাউনের স্মৃতি উস্কে দিল এদিন রাজধানীর রাজপথ। দিল্লি মেট্রোর কামরায় অশীতিপর হরমিত সিং ধিঁলোন বললেন, ‘আজ ডাক্তারের কাছে চেক আপ আছে, তাই বেরনো৷ দিল্লিকে এমন মুর্দানগরী হিসেবে দেখতে হবে তা সত্যিই ভাবিনি।’ এমনকি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি সফরে জনৈক সফরসঙ্গী বললেন, ‘এরা নাকি বলেছিল, গোটা দিল্লি চালু থাকবে? সামান্য কিছু জায়গা বন্ধ রাখা হবে? কই, এয়ারপোর্ট থেকে চাণক্যপুরী এলাম, মনে হল পুরো কারফিউ লেগেছে। এরা তবে কিসের নির্দেশিকা জারি করেছে?’

শনিবার শুরু হচ্ছে জি-২০ সম্মেলন। তার আগে শুক্রবার জনমানবহীন দিল্লির বুকে কার্যত ভারি বুটের আওয়াজ ছাড়া অন্য কিছু শোনা গেল না। অলিতে গলিতে চলল পুলিশি তল্লাশি, নাকা বা রুট মার্চ। মাঝেমধ্যে আকাশে উড়তে দেখা গেল একটা-দুটো ড্রোন। এরিয়াল হামলা ঠেকাতে যেমন বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, তেমনই ভয় ‘বাঁদুরে’ হানারও। রাজধানী দিল্লির কুখ্যাত বাঁদরকুলের উৎপাত ঠেকাতে শহরজুড়ে বসে গেছে হনুমানের সুবিশাল কাট-আউট। রাস্তা থেকে সরানো হয়েছে পথকুকুরদের। সরেছে ‘অবৈধ’ বস্তিও। বেশ কিছু বস্তির আবার মুখ ঢেকেছে সবুজ কাপড়ে, অনেকটা সত্যজিতের ‘হীরক রাজার দেশ’-র আদলে। জি-২০ সম্মেলনে বিশ্বের কাছে রাজধানীর সৌন্দর্যের খতিয়ান তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর কেন্দ্র ও দিল্লি সরকার। সম্মেলনের কথা মাথায় রেখেই তাই প্রায় ৩০০০ গাছ আর ৯ লক্ষ চারাগাছ লাগানো হয়েছে শহরে। আর লাগানো হয়েছে কাতারে কাতারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখ বসানো জি-২০ কাট আউট।

জি-২০ সম্মেলনকে নজরে রেখেই সেজে উঠেছে কার্যত ‘প্রাণহীন’ দিল্লি। দুদিন ব্যাপী সম্মেলনের জন্য দিল্লিকে যেন নতুনভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। আর রাজধানীকে সাজানোর জন্য ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, অন্তত সরকারি রেকর্ড বলছে এমনটাই। কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে ব্যয়গুলিকে মূলত ১২টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে কোন কোন খাতে খরচের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। জি ২০ বৈঠকে যোগ দিতে আসছেন বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রনেতা। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার উপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রাস্তা, ফুটপাথ, রাস্তার সাইনবোর্ড এবং আলোর রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে খরচ হয়েছে বিস্তর। এই চার হাজার কোটি টাকার মধ্যে আইটিপিও, কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক, দিল্লি পুলিশ, এনডিএমসি এবং ডিডিএ এই সামিটের মোট ব্যয়ের ৯৮ শতাংশ বহন করছে। প্রত্যাশিতভাবে প্রশ্ন উঠেছে, এত খরচ, এত এলাহি আয়োজন তা কী দিল্লির আম আদমি দেখে যেতে পারল? কারণ আগামী দু দিন তাঁদের ঘরে থাকার জন্য নির্দেশ জারি করেছে কেন্দ্রীয় প্রশাসন।

আজ থেকে আগামী ৭২ ঘন্টা দিল্লির বুকে খুলবে না কোনও দোকান। একদিকে যখন, কনট প্লেস, খান মার্কেট, সরোজিনী নগর, সদর বাজার, চৌড়ি বাজার, চাঁদনি চক, করোলবাগ-এর মতো জনপ্রিয় হাটবাজার থাকবে বন্ধ। কোটি কোটি লোকসানের মুখ দেখবে হাজার হাজার ব্যবসায়ী, শ্রমিক মজদুর। ঠিক তখনই জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে আগত প্রায় ১০০০ অতিথিদের মাথাপিছু ১০০০ টাকা করে দিতে চলেছে মোদি সরকার। আসলে সরকার ইউপি-আই প্রযুক্তি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে নিল এই পদক্ষেপ। ইউপিআই লেনদেন করতে এই  টাকা দেওয়া হচ্ছে যাতে অতিথি অভ্যাগতদের কেনাকাটার জন্য ১০০০ টাকা করে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ করবে কেন্দ্র৷ চাঁদনি চকের জরির পাড়ের ব্যবসায়ী ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘অতিথিরা ১০০০ টাকা করে পাবেন, কিন্তু এই সম্মেলনের জন্য আমাদের লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়ে গেল সেটা কে দেবে? কি খাওয়াব বউ বাচ্চাদের?’ এ প্রশ্নের উত্তর দেবে কে?

Sandip Sarkar
Sandip Sarkarhttps://uttarbangasambad.com/
Sandip Sarkar Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 22 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments