Friday, September 22, 2023
Homeরাজ্যউত্তরবঙ্গছেলেধরা গুজবে ‘পেটে লাথি’, ভয়ে পালাচ্ছেন ফেরিওয়ালারা

ছেলেধরা গুজবে ‘পেটে লাথি’, ভয়ে পালাচ্ছেন ফেরিওয়ালারা

চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার : ছেলেধরা গুজবে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। শুধু কাজ হারানোই নয়, মালদা, মুর্শিদাবাদ বা দক্ষিণবঙ্গ থেকে আসা শয়ে-শয়ে ফেরিওয়ালা এই ছেলেধরার আতঙ্কে চলে গিয়েছেন কোচবিহার ছেড়ে। কারণ গ্রামে ফেরি করতে গেলেই তাঁদের ঘিরে ধরছেন গ্রামের লোকজন। কাউকে কাউকে বেধড়ক মারধরও করা হচ্ছে। তাই পুজোর মুখে রোজগার শিকেয় তুলে তাঁরা বাড়ি ফিরে গিয়েছেন।

কোচবিহার শহরতলির টাকাগাছ ও শহরের মান্টু দাশগুপ্তপল্লিতে কয়েকশো ফেরিওয়ালা বাড়িভাড়া নিয়ে থাকেন। তাঁরা সকালবেলা বের হয়ে বিভিন্ন সামগ্রী গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করেন। বছরের পর বছর ধরে এটাই তাঁদের জীবিকা। পুজোর মুখেই তাঁদের বিক্রিবাটা জমে ওঠে। তাই সারা বছর তাঁরা এই সময়টার অপেক্ষায় থাকেন। এই সময়কার রোজগারই তাঁদের পরিবারের সারা বছরে খরচ জোগানোর জন্য বড় ভরসা। কিন্তু এ বছর ছেলেধরার গুজবে তাঁদের অন্নসংস্থান মাথায় উঠেছে।

কাশেম শেখের বাড়ি মুর্শিদাবাদের লালগোলায়। তিনি আচার বিক্রি করেন গ্রামে ঘুরে। আবার ওই জেলার বেলডাঙ্গার জওহর শেখ, সাবের শেখ বাড়ির স্টিলের বাসনের পরিবর্তে মাথার চুল সংগ্রহ করেন। এঁরা সকলেই কোচবিহার শহর লাগোয়া টাকাগাছ এলাকায় বাড়িভাড়া করে থাকেন।

সোমবার বিকেলে তাঁরা ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন। তিনজনই বললেন, অন্যবার বিকেলের আলো থাকা পর্যন্ত তাঁরা গ্রামে গ্রামে ঘোরেন। বাসনপত্র তো বটেই, বাচ্চাদের জামাকাপড়, আটপৌরে শাড়ি, কমদামি প্রসাধনীর এই সময় ভালো বিক্রি হয়। অন্যবার ডেরায় ফিরতে রাত হয়ে যায়। অথচ এবার কাজ সেরে আলো থাকতে থাকতেই ফিরে চলে এসেছেন।

কাশেম বলেন, ‘শহর আর আশপাশের এলাকায় ঘুরেই ফিরে এসেছি। গ্রামে যাওয়ার সাহসই পাচ্ছি না। যখন তখন ছেলেধরা বলে আটকে দেওয়া হচ্ছে।’ এতদিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে মালপত্র বিক্রি করায় তাঁরা অনেকের মুখচেনা হয়ে গিয়েছিলেন। পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে ধারবাকিতেও কারবার করেছেন। কাশেমের আক্ষেপ, ‘সেই চেনা লোকগুলোও কেমন যেন অচেনা হয়ে গিয়েছে। তাই কোনওরকমে আর ক’টা দিন কাটিয়ে বাড়ি চলে যাব। কিছু মালপত্র রয়েছে এগুলো শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি।’

মালদার কুমেদপুরে বাড়ি বিরাজ সরকার, কমল দাসের। তাঁরা এখানে ঘুরে মিহিদানা বিক্রি করেন। দুজনেই বলছেন, ব্যবসা খুব খারাপ। গ্রামে গ্রামে ছেলেধরা আতঙ্ক রয়েছে। গ্রামের লোককে বোঝালেও বুঝতে চাইছেন না। তাঁরা বলছে, আপনারাই রাতে  লোক পাঠান। দিনের বেলা বাড়িটা দেখে যান। কার বাড়িতে ক’জন রয়েছেন, এই সব তথ্য আপনারা দিচ্ছেন। তবে ভালো মানুষ কিছু আছেন, যাঁরা বুঝতে পারছেন আমরা ফেরিওয়ালা। তাই আর কয়েকটা দিন থাকব। সামনেই পুজো। এবার হয়তো আর বাড়ির ছেলেমেয়েদের নতুন জামাকাপড় দিতে পারব না।

ভিনজেলা বা ভিনরাজ্য থেকে আসা ফেরিওয়ালাদের প্রায় সকলেরই এমন অভিজ্ঞতা। পুজোর আগে বাড়িতে বাড়তি টাকা পাঠানো তো দূরের কথা, কোচবিহারে তাঁদের বাড়িভাড়া দিয়ে থাকা-খাওয়ার খরচ ওঠানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। আগামীদিনে কীভাবে চলবে, তাই ভেবেই মাথায় হাত তাঁদের। কয়েকজন হতাশ গলায় বলেন, মহাজনের কাছে বকেয়া রয়েছে। কোচবিহারে দশ বছর ধরে আসছি। এমন ঘটনা কোনওদিন হয়নি। বারবার প্রচার করেও জেলা থেকে ছেলেধরার আতঙ্ক কাটানো যাচ্ছে না। তাই জেলা পুলিশের কর্তাদের কাছেও এটা বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments