কলকাতা ও শিলিগুড়ি : সেবকে এলিভেটেড করিডর তৈরির অর্থবরাদ্দ যখন করেছে কেন্দ্র, তখন বিকল্প করোনেশন সেতুতে সায় দেওয়ার বার্তা দিল রাজ্য। পূর্ত দপ্তর সূত্রে খবর, সেবকে তিস্তার ওপর বিকল্প সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা প্রায় শেষপর্যায়ে। ডিপিআর তৈরির কাজ চূড়ান্ত করতে প্রয়োজনীয় সবকিছু সেরে ফেলা হচ্ছে দ্রুতগতিতে। ডিপিআর চূড়ান্ত হলেই অনুমোদনের জন্য তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণমন্ত্রকে। বৃহস্পতিবার নবান্নে পূর্তসচিব অন্তরা আচার্য ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’-কে বলেছেন, ‘ডিপিআর দিল্লিতে পাঠানো নিয়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। সেতু নির্মাণের ডিপিআর চূড়ান্ত করার আগে পরিবেশগত দু’একটি বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই এলাকায় হাতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর যাতায়াতের পথ রয়েছে। ফলে কিছু এলিভেটেড ওয়ে নির্মাণ করাও দরকার। যার জন্য প্রয়োজন বন ও পরিবেশমন্ত্রকের ছাড়পত্র লাগবে। আশা করা যায়, এসব মিটলেই আমরা কেন্দ্রের কাছে ডিপিআর পাঠাতে পারব।’
নতুন সেতুর ক্ষেত্রে অনেক জট রয়েছে বলে মনে করছে বিকল্প সেতুর জন্য আন্দোলন করে আসা ডুয়ার্স ফোরাম। সংগঠনের সম্পাদক চন্দন রায়ের বক্তব্য, ‘ডিপিআর তৈরি মানেই সেতু নির্মাণ নয়। এর আগেও তিনবার ডিপিআর তৈরি হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ এবং অন্য কিছু কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। সড়ক পরিবহণমন্ত্রকের গেজেট নোটিফিকেশনে সেতুর অর্থবরাদ্দের উল্লেখ নেই।’
১৯৪১ সালে চালু হওয়া করোনেশন সেতুকে দুর্বল ঘোষণা করা হয়েছে অনেকদিন আগেই। পরবর্তীতে একাধিক ভূমিকম্পে সেতুটি নিয়ে আশঙ্কাও তৈরি হয়। বর্তমানে ১০ টনের বেশি বাণিজ্যিক ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে করোনেশন ব্রিজের বিকল্প তৈরির দাবি দীর্ঘদিনের। দার্জিলিংয়ের সাংসদ হওয়ার পর বিকল্প সেতু গড়ে তোলার ব্যাপারে উদ্যোগ নেন রাজু বিস্ট। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে দেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত স্বার্থ। সড়ক পরিবহণমন্ত্রকে ইতিমধ্যে বিষয়টি উল্লেখ করে সেতুর প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে প্রতিরক্ষামন্ত্রকও। সবদিক ভেবেই সেবকে বিকল্প একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে তার ডিপিআর অনুমোদনের জন্য দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণমন্ত্রকে পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করে রাজ্য সরকার।
পূর্ত দপ্তর জানিয়েছে, সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ব্যয় হতে পারে ১২০০ কোটি টাকা। রাস্তা হবে চার লেনের। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬০০ মিটার। দপ্তরের এক শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক বলছেন, ‘তিস্তার ওপর এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৬০০ মিটার হলেও সেতুর দু’দিকের সংযোগকারী রাস্তা তৈরি হবে অনেকটা এলাকাজুড়ে। এজন্য পরিবেশগত ছাড়পত্র দরকার। বিশেষ করে ওই এলাকা হাতি সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর চলাচলের করিডর। ছাড়পত্র পেতে আবেদন করা হয়েছে। সমীক্ষা ও কথাবার্তা চলছে পরিবেশ ও বনমন্ত্রকের সঙ্গে।’
অতীতেও সেতু তৈরির বিষয়টি সামনে এসেছে। কিন্তু সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়নি। তাই বিশ্বাস রাখতে পারছেন না অনেকেই। তবে সাংসদ রাজু বিস্টের দাবি, ‘করোনেশনের বিকল্প সেতু হবেই। এ ব্যাপারে কেন্দ্র সমস্ত ক্ষেত্রে সদর্থক ভূমিকা পালন করছে। নতুন সেতুর কাজ শুরু হতে বেশিদিন লাগবে না।’