গয়েরকাটা: ‘বই আঁকড়ে ধরো, ওটাই হাতিয়ার’ পথে-মিছিলে, উৎসবে এই স্লোগান উঠলেও বইমুখীর সংখ্যাটা দিন-দিন কমছে বইকি। ৩১ আগস্ট গ্রন্থাগার দিবস পালনে গালভরা পোস্টে ভোরে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু লাইব্রেরিগুলো পাঠকের অপেক্ষায় দিনযাপন করে। বিশ্বায়নের যুগে মুঠোফোনে বন্দি বর্তমান প্রজন্ম। তেমনই গয়েরকাটার মানুষের এক সময় সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছিল জাগৃতি পাঠাগার। লাইব্রেরিতে রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের কুড়ি হাজারেরও বেশি বই। তবে অভাব শুধু পাঠকের। লাইব্রেরি জানিয়েছে, বছরদশেক আগেও যেখানে প্রতিদিন জনাত্রিশেক পাঠক আসতেন। এখন সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৭-৮ এ।
১৯৫২ গয়েরকাটায় তৈরি হয়েছিল একটি মহিলা সমিতি। সেসময় বিয়েতে বই উপহার দেওয়াটা ছিল একটা রীতি। সেই মহিলা সমিতির সদস্যরা নিজেদের ও বিভিন্ন নববধূর পাওয়া বই সংগ্রহ করে মহিলা পাঠকদের বইয়ের তৃষ্ণা মেটাত। সংগৃহীত বই একত্রিত করে ১৯৭০ সালের ১৫ আগস্ট তেমনই কয়েকজন মহিলার হাত ধরে গোড়াপত্তন হয় জাগৃতি পাঠাগারের। ১৯৭৬-এ রাজ্য সরকারের অনুমোদন পাওয়ার পর ১৯৮৭ সালে টাউন লাইব্রেরি হয় এটি। জেলা লাইব্রেরি অফিসার ইমরান শেখ জানিয়েছেন, ‘সমস্যা নিয়ে পরিচালন সমিতির সঙ্গে সত্ত্বর কথা বলবেন তিনি।
তবে বর্তমানে সেই মহিমা হারিয়েছে সেই লাইব্রেরি। এখন সেখানে কোনও স্থায়ী লাইব্রেরিয়ান নেই। সপ্তাহে দু’দিন অন্য এক লাইব্রেরিয়ান এই গ্রন্থাগারের দায়ভার সামলান। দুই কর্মীপদ শূন্য পড়ে রয়েছে। লাইব্রেরির সদস্য সংখ্যাও টেনেটুনে চারশোও পেরোবে না।
লাইব্রেরি পরিচালন সমিতির সভাপতি কাঞ্চন রায়ের বক্তব্য, ‘লাইব্রেরি লাগোয়া একটি বড় গাছের জন্য ভবনের প্রাচীর ভেঙে যাচ্ছে। ফলে লাইব্রেরির নিরাপত্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি লাইব্রেরিগুলিকে যুগের সঙ্গে তাল মেলিয়ে চলতে গেলে সেগুলির আধুনিকীকরণ জরুরি। আমরা চেষ্টা করছি।’ সম্প্রতি ইংরেজিমাধ্যমের পড়ুয়াদের জন্য বই কেনা হয়েছে জানিয়ে বললেন, ‘তবে সার্বিক উন্নতির জন্য প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’
যে জমিতে লাইব্রেরিটি রয়েছে সেটি জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের অন্তর্গত। ১০ বছর অন্তর লিজ পুনর্নবীকরণ করতে হয়। ফলে দপ্তর থেকে ফান্ড পেতে সমস্যা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা তনুশ্রী রায়ের কথায়, ‘এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন আমার শাশুড়ি মা। তাঁর মুখে লাইব্রেরি তৈরির ইতিহাস শুনেছিলাম। এটি সত্যি গয়েরকাটার গর্ব। এটির দ্রুত আধুনিকীকরণ প্রয়োজন।’ যদিও জেলা পরিষদের আগামী মিটিং-এ জাগৃতি পাঠাগারের বিষয়টি তুলে ধরবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি সীমা চৌধুরী। সেইসঙ্গে এখানে ফ্রি ওয়াই-ফাই, ইন্টারনেট কানেকশন সহ কম্পিউটার, ডিজিটাল উপায়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য, ইংরেজিমাধ্যমের বই ইত্যাদির ব্যবস্থার দাবি উঠেছে স্থানীয় মহলে।