সামসী: গুলজার আলম। বয়স চল্লিশ। এক সময় সবই ছিল তার। কিন্তু এখন কিছুই নেই। রাজা এখন ফকির।তবে ভিক্ষে করে নয়, রাস্তার পাশে ছোট্ট একটি দোকান করে জীবন যুদ্ধে টিকে রয়েছে প্রতিবন্ধী গুলজার।
সামসী-চাঁচল (Samsi) ৩১ নং জাতীয় সড়কের পাশে টেবিল ও চেয়ার পেতে ছোট্ট একটি দোকান রয়েছে গুলজারের। সেখানেই তার বাড়ি। বিড়ি, সিগারেট, বিস্কুট, চকোলেট সব মিলিয়ে মেরে কেটে হাজার খানেক টাকার মাল রয়েছে তার দোকানে। রোদ, বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য দোকানের উপরে ছেড়াফাটা ত্রিপল টাঙানো রয়েছে। সারাদিনে খুব বেশি হলে ১০০ বা ২০০ টাকার মতো বিক্রি হয়। তাতে সংসার চলেনা ঠিকই, তবে আত্মসম্মানের সঙ্গে বাঁচা যায়।
বাবা-মায়ের চার সন্তানের মধ্যে সবার বড় গুলজার। তিনি পেশায় ছিলেন ড্রাইভার। তাঁর নিজস্ব ৬ চাকার দুটি গাড়ি ছিল। ছিল প্যান্ডেলের ব্যবসাও। কিন্তু বছর তিনেক আগে হঠাৎ ব্রেন স্ট্রোক হয়ে যাওয়ায় জীবনের সব কিছু তছনছ হয়ে যায়। একটানা কলকাতার একটি নার্সিংহোমের টানা চিকিৎসা চলে। সেখানে প্রায় ১২ লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে। কিন্তু তিনি সেরে ওঠেননি।
গুলজারের মা গোলেনুর বিবি ছেলের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তার বক্তব্য, ‘গুলজারের অসুখের পর পর বৌমা দুই কন্যা সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায়। আর ফিরে আসেনি। এদিকে, ছেলের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে বৌমা তিন বিঘে জমি জোরপূর্বক নিজের নামে রেজিস্ট্রিও করে নেন। তারপর থেকে অসহায় গুলজার আমার সঙ্গেই থাকে। প্রতিমাসে ছেলের ওষুধ বাবদ আড়াই/তিন হাজার টাকা মতো খরচ হয়। স্ট্রোকের পর থেকে শরীরের পুরো ডান দিক ঠিক মতো কাজ করেনা। অস্পষ্টভাবে কথা বলে। ইদানিং চোখেও কম দেখছে।’ এই পরিস্থিতিতে অসহায় মায়ের আবেদন, ‘ছেলের প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট হয়েছে। প্রতিবন্ধী ভাতা মিললে অনেকটা উপকৃত হতাম।’
অন্যদিকে, গুলজার অস্পষ্ট গলায় বলেন, ‘খুব কষ্টে আছি। যদি ভালো হয়ে যাই স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তান নিয়ে ফের আগের মতো সুখে সংসার করবো।’