রাঙ্গাপানিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা গত কয়েক বছরের দুর্ঘটনাকে মনে করিয়ে দিয়ে গেল। আমায় সবচেয়ে ভারাক্রান্ত করছে একটা জিনিস। গত কয়েক বছরে এতগুলি রেল দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকেও আমরা শিক্ষা নিলাম না। আমরা মানে কেন্দ্রীয় সরকারের রেলমন্ত্রক।
রেলমন্ত্রকের চেয়ারম্যানের দেওয়া বিবৃতি দেখে কয়েকটা প্রশ্ন উঠবে। এক, মন্ত্রকের দাবি ওভারশুটিং হয়েছে। যতটুকু শুনলাম, অটোম্যাটিক সিগন্যালিং জোনে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। ভোর সাড়ে পাঁচটায় ওই লাইনের সিগন্যাল বিকল হয়ে গেলে পেপার সিগন্যাল ব্যবহার করা হয়। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু মালগাড়ি কী সিগন্যাল পেয়েছিল, বা আদৌ কোনও সিগন্যাল পেয়েছিল কি না তা তদন্ত না হলে বলা মুশকিল। তদন্ত স্বচ্ছভাবে হবে তো? করমণ্ডলের মতো দায়সারাভাবে কাজ হবে না তো?
দুই, যদি চালক লালবার্তা দেখেন, তাহলে এক মিনিটের জন্যে চালককে ট্রেন থামাতে হয়। তারপর তিনি ধীরগতিতে ট্রেন এগিয়ে নিয়ে যান, যতক্ষণ না পরবর্তী সিগন্যাল পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে আদপে কী হয়েছিল, তা বলতে পারতেন মালগাড়ির দুই চালক এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের শেষ কামরার গার্ড। তাঁরা সকলেই দুর্ঘটনায় মৃত। বলবেন কারা? সঠিক কারণ জানা যাবে তো? যাঁরা সিগন্যাল দিয়েছিলেন, তাঁরা তো বলবেনই যে ঠিক সিগন্যাল দিয়েছিলাম!
তিন, আমার মনে পড়ছে না শেষ কবে রেলে কর্মী নিয়োগ হয়েছে। যাঁরা বর্তমান কর্মচারী, তাঁরা বিশ্রাম পাচ্ছেন না। প্রচুর শূন্যপদ। কর্মী অপ্রতুল। একাধিক কাজের বোঝা চাপালে মানুষের পারফরমেন্সে তো ব্যাঘাত ঘটবেই। কিছুদিন আগে কলেজ স্ট্রিটে চাকরির পরীক্ষার বই রাখেন, এমন দোকানিদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানলাম, রেলের চাকরির পরীক্ষার বই বিক্রি অনেক কমে গিয়েছে। বারবার বলা হচ্ছে, প্রচুর লোক নেওয়া হবে, কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। শূন্যপদ পূরণ হবে কবে?
চার, রেলমন্ত্রক বরাবর গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে থাকবে, আগে আলাদা করে রেল বাজেট পেশ করা হত। বর্তমানে কেন্দ্রীয় বাজেটের সঙ্গেই নমো-নমো করে গোল গোল কিছু কথা বলে ছেড়ে দেওয়া হয়। রেল আবার কবে গুরুত্ব পাবে?
পাঁচ, যতই ঢাকঢোল পিটিয়ে লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের কথা বলা হোক, বাস্তবে রেল লোকসানে চলছে। যার ফলে পরিকাঠামোগত সমস্যা আরও বাড়ছে। এই সমস্যার সমাধানে রেল কী কী সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছে?
ছয়, সারা দেশে রেল দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানেও আজকাল জল মেশানো হচ্ছে। ছোট ছোট দুর্ঘটনাগুলো ধর্তব্যের মধ্যেই আনা হচ্ছে না। দুর্ঘটনার সংখ্যা কমছে বলে রেলের তরফে দাবি করা হলেও বাস্তবে গত কয়েক বছরে দুর্ঘটনার সংখ্যা কী হারে বেড়েছে, তা আমাদের চোখের সামনে। সরকার কি এর দায় এড়াতে পারবে? পারে?
সাত, দূরপাল্লার সংরক্ষিত কোচে বর্তমানে ওঠা যায় না। দেদার যাত্রী উঠে পড়ছে। কিছুদিন আগেই একটা ভিডিওতে দেখলাম এসি কোচে অতিরিক্ত লোক উঠে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ সেই কোচে যাওয়ার বৈধ টিকিট যাঁদের কাছে, তাঁদের উঠতে দেওয়া হল না। রেলকর্মীরা কোথায়? কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় কি?
আট, বন্দে ভারতের মতো কিছু ট্রেনে সকলের যাত্রা করার সাধ্য থাকে না। সেই ট্রেন নিয়ে যত মাতামাতি, অন্য দূরপাল্লার তুলনামূলক কম ভাড়ার ট্রেন নিয়ে কি তা হয়?
এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে করমণ্ডল কিংবা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের মতো দুর্ঘটনা আগামীদিনেও ঘটতে পারে। সমস্যা অনেক। প্রশ্ন অনেক। সমাধান নেই। উত্তর নেই।
(লেখক রেলের প্রাক্তন অফিসার)
আসানসোল: কয়লা পাচার মামলায় ফের কোমর বেঁধে নেমেছে সিবিআই। বলতে গেলে লোকসভা নির্বাচন মিটতেই সক্রিয়…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: পিএইচডি (PhD) করতে চান জেলবন্দি এক শীর্ষ মাওবাদী নেতা (Maoist leader)…
শিলিগুড়ি: ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকার দাপুটে তৃণমূল (Tmc) নেতা তথা দলের ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি ব্লক সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিককে…
নকশালবাড়িঃ মঙ্গলবার রাতে নকশালবাড়ি সাতভাইয়া এলাকায় পুলিসের অভিযানে উদ্ধার হল প্রচুর সুপারি। সুপারি পাচারের অভিযোগে…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: কুকিং শোয়ে গোমাংস রান্না নিয়ে চরম কটাক্ষের শিকার হলেন টলিপাড়ার জনপ্রিয়…
বালুরঘাটঃ বালুরঘাটের বিভিন্ন খাবারের দোকানে আচমকা হানা ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের। বুধবার দুপুরে শহরের বিভিন্ন রেস্তোরাঁ,…
This website uses cookies.