বালুরঘাট: সামনে সাতটি ঘোড়া। রথের উপর বসে আছেন সূর্যদেব। সেই রথ টেনে নিয়ে যাচ্ছেন সারথি। তার সঙ্গেই রয়েছে গঙ্গা, কর্ণ ও গণেশের মূর্তি। সম্পূর্ণটাই মাটি দিয়ে তৈরি করে তাক লাগালেন বালুরঘাটের মৃৎশিল্পী দেবু দাস। একা হাতে মাত্র সাত দিনে সম্পূর্ণ প্রতিমা তৈরি করে নজর কেড়েছেন ৭০ বছর বয়সী এই শিল্পী।
দেবু দাসের বাড়ি শহরে সাড়ে তিন নম্বর মোড় এলাকায়। বয়স অনেকটাই হয়েছে তাঁর। বয়সের ভারে এখন আর বড় পুজো উদ্যোক্তাদের প্রতিমার বরাত নেওয়া হয় না। আগে দুর্গাপুজোয় বালুরঘাটের বড় বাজেটের সৃজনী, কচিকলা, অভিযাত্রী ক্লাবের প্রতিমা তিনি তৈরি করে সুনাম অর্জন করেছেন। এমনকি তাঁর হাতে তৈরি প্রতিমা রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় পাড়ি দিয়েছে। তবুও এই বছর বালুরঘাটের কলেজ স্কোয়ার ক্লাবের সদৃশ কালী প্রতিমা তৈরি করে চমক দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই ছট পুজো উপলক্ষ্যে এক পুজো উদ্যোক্তাদের তরফে তিনি বরাত পান। যেখানে সূর্যদেবের প্রতিমার সঙ্গে সাতটি ঘোড়া, কর্ণ, গঙ্গা ও গণেশ প্রতিমা একসঙ্গে করার অনুরোধ করা হয়। টানা সাত দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে তিনি সম্পূর্ণ প্রতিমা তৈরি করেছেন। যদিও এখন বাঁশ, মাটি, খড়, রং সহ বিভিন্ন সরঞ্জামের দাম অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমে এসেছে। তবু নেশার জোরেই তিনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর প্রতিমা তৈরি নেশা। সেটাই পড়ে পেশাতে পরিণত হয়। গত ৫০ বছর ধরে তিনি এই প্রতিমা তৈরীর কাজ করছেন। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম আর এই পেশায় আসবে না বলে তিনি জানান।
মৃৎশিল্পী দেবু দাস বলেন, ‘মৃৎশিল্পীদের পরিশ্রম অনুযায়ী মজুরি নেই। সরকারি তরফে কোনও ভাতার ব্যবস্থা নেই। কাজের জন্য ঋণ দিলে সুবিধা হয়। এখন মাটির দাম প্রতি ভ্যান ৪০০ টাকা, খড় ৪০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। একটি বাঁশের দাম ২০০ টাকা। তারপরেও তা বহনের খরচ রয়েছে। সব মিলিয়ে লাভের অংক তেমন ঘরে ঢোকে না। কখনও টাকার কথা তেমন ভাবিনি। মূর্তিকে নিখুঁতভাবে তৈরি করাই মূল লক্ষ্য। এবার সহকারী ছাড়াই একাহাতে সমস্ত প্রতিমা গড়েছি। যার মধ্যে অন্যতম সাতটি ঘোড়া সহ সূর্যদেব। মৃৎশিল্পীদের বর্তমান দুর্দশা দেখে সন্তানরা আর এই পেশায় আসতে চান না।’