নাগরাকাটা: মেলেনি বোনাস। বকেয়া আছে মজুরিও। এমন পরিস্থিতিতে সরকারী অনুদানের ৮৫ হাজার টাকা দিয়ে কোনরকমে দশভুজার আরাধনায় সামিল হয়েছিলেন রেড ব্যাংক চা বাগানের শ্রমিকরা। প্রবল বৃষ্টিতে মায়ের সেই মণ্ডপও ধসে পড়লো বৃহস্পতিবার গভীর রাতে। কয়েকজনের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় সিংহবাহিনীর মূর্তি অবশ্য অক্ষতই থেকে গিয়েছে। ভাঙা প্যান্ডেলেই শুক্রবার সকালে মহাষ্টমীর অঞ্জলী দিয়েছেন নতুন করে আর্থিক সংকটের মেঘ ঘনিয়ে আসা চা বাগানের শ্রমিকরা। সব মিলিয়ে এক সময়ে লাগাতার শ্রমিক মৃত্যুর জেরে গোটা দেশেই আলোচিত রেড ব্যাংকের শ্রমিকরা পুজোর সময়েও ভাল নেই।
টানা কুড়ি বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ এর অগাস্টে ওই বাগানটি খোলে। নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয় সেখানে তবে দু’বছর পেরোতেই সমস্যার চোরাবালিতে আটকে যাবার যোগাড় হয়েছে শ্রমিকদের। এর মূল কারণ হিসেবে যা উঠে আসছে তা হল নয়া কর্ণধার সুশীল কুমার পালের এখনও বাগানের জমির লিজ না পাওয়ার বিষয়টি। এর ফলে ব্যাংক ঋণ না মেলায় বিনিয়োগের কাজটি আটকে আছে। ফ্যাক্টরি তৈরির কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়ে গেলেও তহবিলের অভাবে থমকে আছে। নতুন করে ২০০ হেক্টর জমিতে রেড ব্যাংকে চা গাছের চারা রোপন করা হয়েছিল। একদিকে হাতি অন্যদিকে পোকার আক্রমণে ৪০ হেক্টর জমির সেই চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এবছর শ্রমিকদের আর বোনাস দিতে পারেননি মালিক। তবুও শ্রমিকরা মালিকের পাশেই আছেন।
রেড ব্যাংকের পুজো কমিটির এক কর্তা ধোনেশনাথ বলেন, ‘বন্ধ থাকাকালীন অবস্থাতেও কোনদিনও মায়ের পুজো বন্ধ করিনি। এবারও পুজো হচ্ছিল। ভরসা ছিল সরকারি ৮৫ হাজার টাকার অনুদান। তার ওপর ৫০ হাজার টাকা ঋণ করে পুজোর আয়োজন করা হয়। এভাবে মণ্ডপ ভেঙে পড়ার মতো বিপর্যয় যে নেমে আসবে তা কল্পনাতেও ভাবিনি।’ প্রবীন সিং ঝাঁ নামে বাগানের এক শিক্ষক বলেন, ‘অনেক টালমাটাল পরিস্থিতির মাঝেও পুজো হচ্ছিল। দেবীও কি আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন! মায়ের কাছে একটাই প্রার্থনা এই দুর্যোগ কাটিয়ে দাও।’ দীপাঞ্জনী থাপা ঘোষ নামে এক শ্রমিক বলছেন, ‘বোনাস নেই। মজুরি বকেয়া। তাই কোনও শ্রমিকের কাছ থেকে চাঁদা তোলাও সম্ভব হয়নি। আমাদের এই কষ্টের পুজোতেও প্রকৃতি এমন বিরূপ। কারোরই মন মেজাজ এখানে আর ভালো নেই।’ রেড ব্যাংকের শ্রমিকরা চান দ্রুত তাঁদের স্বার্থে মালিককে যেন জমির লিজ দেওয়া হয়। এবং সেই সঙ্গে আগের মত প্রশাসনের পক্ষ থেকে জিআর এর চাল দেওয়া শুরু হয় মহাষ্টমীর সকালে এমন দাবিতে সরব হয়েছেন।