জটেশ্বর: প্রাক্তন শিক্ষিকা যে এখন প্রধান শিক্ষিকা হয়ে তাদের স্কুলে যোগ দিতে আসবেন, তা ঘুণাক্ষরেও জানত না ফালাকাটার ডালিমপুর হেমন্তময়ী প্রাথমিকের পড়ুয়ারা। প্রথমদিন স্কুলে শিক্ষিকা যোগ দিতে আসার পরেই কম হইচই হয়নি। প্রধান শিক্ষিকাকে ঘিরে ধরে গো ব্যাক স্লোগানও দিয়েছেন অভিভাবকরা। সেই শিক্ষিকাই আবার শুক্রবার ওই স্কুলে যোগ দিতে আসেন। ফের অভিভাবক সহ প্রতিবেশীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। নানা ধরনের কথাবার্তা চলতে থাকে। এদিন তাই স্কুল চললেও ক্লাসে মন ছিল না একাধিক পড়ুয়ার।
ক্লাস চলাকালীন উঁকি মেরে দু’-একবার বাইরে তাকিয়ে দেখেছে কী হচ্ছে। আর বড়দের কীর্তির প্রভাব পড়েছে ছোটদের উপর। ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষিকা না থাকলেই বড়দের স্লোগানের বুলি আওড়াচ্ছে পড়ুয়ারাই। স্কুলের সামনে বারবার এধরনের ঘটনায় স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যেও প্রভাব পড়ছে বলে দাবি জেলার শিক্ষা মহলের। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে ঢুকতে বাধা দেয়ার ঘটনায় পড়ুয়াদের যেমন পঠনপাঠনে ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি তাদের মনের উপরও খারাপ প্রভাব পড়েছে।
সমস্যার কথা মানছেন ভিলেজ এডুকেশন কমিটি বা ভিইসি’র সভাপতি অমূল্য বর্মন। তিনি বলেন, ‘এটা সত্যি যে স্কুলের সামনে প্রতিদিন আন্দোলনের ফলে পড়ুয়ারা পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারছেন না। এটার সুরাহা হওয়া উচিত। ওই শিক্ষিকাকে অভিভাবকরা কেউ চাইছেন না। তবুও তিনি আসছেন। এজন্য অভিভাবকরা ক্ষিপ্ত।’
অভিভাবকরাও সমস্যার কথা মানছেন। রিঙ্কু দাস নামে এক অভিভাবক যেমন বললেন, ‘পড়ুয়ারা পড়ালেখায় মন দিতে যাবে, এমন সময় হইচই বাঁধছে। অনেক পড়ুয়া ক্লাস ফাঁকি দিয়ে স্কুলের বাইরে নজর দিচ্ছে।’ তবে এসব বুঝলেও তাঁদের ক্ষোভ কমছে না। আরেক অভিভাবক প্রতিমা সরকার বলেন, ‘এই শিক্ষিকা আগে দেরি করে স্কুলে আসতেন। তাড়াতাড়ি চলে যেতেন। আমরা তাঁকে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দিতে দেব না।’ আর আরতি সরকার নামে এক অভিভাবকের কথায়, ‘তিনি স্কুলে যোগ দিলে সব পড়ুয়াকে আমরা নিয়ে যাব।’
শিক্ষা মহল বলছে, এবার এই ঘটনায় এসআই বা ডিআই হস্তক্ষেপ করুক। প্রাথমিকের ফালাকাটা উত্তর মণ্ডল পরিদর্শক পিউ দে’কে ফোন করা হলে তিনি ফোন না ধরায় তাঁর বক্তব্য মেলেনি। আর প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দিতে আসা ওই শিক্ষিকা স্বাতী পাল বলছেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে যা বলেছেন, সেটাই করছি।’
শুক্রবারও বেলা ১১টা নাগাদ স্কুলে ঢুকতে যান স্বাতী। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে রাস্তার উপরেই ঘেরাও করেন অভিভাবকরা। তাঁকে রাস্তা থেকে মাঠে নামতেই দেওয়া হয়নি। বেলা ১টা নাগাদ স্কুল থেকে চলে যান ওই শিক্ষিকা।