আলিপুরদুয়ার: নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশন। এই স্টেশনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে জনবসতি। প্রায় ৬০ বছর আগেও এই এলাকা এমন ছিল না। কিন্তু যাঁর জন্য এলাকার উন্নয়ন হল, তাঁকে চেনেই না নয়া প্রজন্ম। তিনি হলেন বঙ্কিমচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর জন্যই গড়ে ওঠে এই স্টেশন এবং তাঁকে ঘিরে জনবসতিও একইভাবে বাড়তে থাকে। তিনি ছিলেন রেলের চিফ ইঞ্জিনিয়ার এবং তাঁর কথাতেই নিউ আলিপুরদুয়ার ভায়া হয়ে বারবিশা হয়ে অসমের দিকে বর্তমান রেললাইনটি পাতার কাজ শুরু হয়। এমনটাই জানিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের প্রবীণরা। বঙ্কিমচন্দ্রবাবুর নামে এই এলাকার নামকরণ হোক, চাইছেন সবাই।
আলিপুরদুয়ার প্রবীণ নাগরিক মঞ্চের তরফে লোহারপুল এলাকা থেকে রাধামাধব মন্দির পর্যন্ত রাস্তাটিকে বঙ্কিমচন্দ্রবাবুর নামে রাখার দাবি তোলা হয়। এই দাবি নিয়ে পুরসভার চেয়ারম্যানের কাছে একটি দাবিপত্র পেশ করতে চলেছেন প্রবীণ নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসু। তিনি বলেন, ‘বঙ্কিমচন্দ্রবাবু আমাদের কাছে বিসি গাঙ্গুলি নামেই পরিচিত। তিনি শহরের বাসিন্দাই ছিলেন। আলিপুরদুয়ার হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে চলে যান দিনহাটায়। পরবর্তীতে তিনি রেলের চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে আলিপুরদুয়ারে যোগ দেন।’ তাঁর সংযোজন, ‘গুয়াহাটি থেকে সোজা কোচবিহারের দিকে রেললাইন তৈরির কাজটি চলে যাচ্ছিল। কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্রবাবুর জন্য নিউ আলিপুরদুয়ার ভায়া হয়ে বারবিশা হয়ে অসমের দিকে বর্তমান রেললাইনটি পাতার কাজ শুরু হয়। নাম দেওয়া হয় নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশন। স্টেশনটি হয়ে গেলে তিনি চলে যান দিল্লিতে। তাঁর এই অবদানের জন্যই আজ আমরা নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশন পেয়েছি।’
শহরের বিশিষ্ট নাগরিক সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘বিসি গাঙ্গুলিকে আমি কাকু বলে ডাকতাম। রেল বোর্ডের এক সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁর জন্যেই নিউ আলিপুরদুয়ার হয়ে অসম পর্যন্ত যাওয়ার রেললাইনটি তৈরি হয়। এই কাজের জন্য আমরা তাঁর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।’
এই বিষয়টি নিয়ে নয়া প্রজন্ম কিছু না জানলেও, প্রবীণদের কাছে বড্ড আবেগের। বিশিষ্ট নাগরিক পরিমল দে বলেন, ‘বঙ্কিমচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে এলাকার নামকরণের দাবি সমর্থন করি। পুরসভাকে প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি সমর্থন করি।’
শহরের বিশিষ্ট বর্ষীয়ান আইনজীবী জহর মজুমদারের বক্তব্য, ‘ছোটবেলায় তাঁকে দেখেছি। তিনি বাবার সহপাঠী ছিলেন। শেষ দেখা হয়েছিল যখন আমি আইন পড়তে কলকাতায় গিয়েছিলাম। ঢাকুরিয়ায় ফ্ল্যাটে দেখা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি না থাকলে বর্তমানে নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনও থাকত না। অসম যাওয়াও হয়ে উঠত না। তাঁর এই কাজের জন্য কৃতজ্ঞ আলিপুরদুয়ারবাসী এবং তাঁর নামে রাস্তার নামকরণ হোক।’ বঙ্কিমচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে আলোচনা, তাঁর মূর্তি স্থাপন, রাস্তার নামকরণ করলে বর্তমান প্রজন্ম তাঁর সম্পর্কে জানতে পারবে বলে জানান তাঁরা।