দেওয়ানহাট: তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের ছায়া এসে পড়ল এবার রাজ্য ভাওয়াইয়া সংগীত প্রতিযোগিতায়। প্রায় নজিরবিহীনভাবে। রবীন্দ্রনাথ ঘোষ চেয়ারম্যান হওয়ায় সোমবার রাজ্য ভাওয়াইয়ার সরকারি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকলেন না উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ, সাংসদ জগদীশ বর্মা বসুনিয়া। তৃণমূলের তিন বিধায়কও অনুপস্থিত ছিলেন। রাজ্য ভাওয়াইয়া কমিটির সদস্য হলেও দলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিকও অনুষ্ঠানে আসেননি।
রবীন্দ্রনাথ ভাওয়াইয়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করায় তাঁকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মন। তাঁর বক্তব্য, ‘রবিবাবু নিজে চেয়ারম্যান। যদি ওঁর ভাওয়াইয়ার প্রতি ভালোবাসা থাকত তাহলে কোনও খ্যাতনামা ভাওয়াইয়াশিল্পীকে দিয়ে এর উদ্বোধন করাতেন। নিজে উদ্বোধক হতেন না। এতেই বোঝা যাচ্ছে নামটা কে কামাই করতে চাইছে?’ এই ঘটনায় সাংস্কৃতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। রবীন্দ্রনাথ অবশ্য বিতর্ক উসকে দিয়ে বলেন, ‘সবাইকে সরকারিভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভাওয়াইয়াকে যাঁরা ভালোবাসেন তাঁরা আজকের দিনে কেউ ঘরে বসে থাকতে পারবেন না।’
রাজ্য সরকারের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দপ্তর বিগত বছরগুলির মতো এবারও ৩৬তম রাজ্য ভাওয়াইয়ার চেয়ারম্যান হিসাবে রবীন্দ্রনাথকে দায়িত্ব দেয়। তিনি কমিটির বাকি সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুরে এবারের প্রতিযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নেন। যা ভাওয়াইয়ার তীর্থভূমি হিসেবে পরিচিত। কারণ আব্বাসউদ্দিন আহমেদ, নায়েব আলি টেপু, প্যারীমোহন দাসের মতো প্রবাদপ্রতিম শিল্পীরা এই এলাকা থেকেই সংগীত সাধনা করেছেন। এদিন প্রতিযোগিতার উদ্বোধনে জেলার মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতাদের একাংশ অনুপস্থিত থাকতে পারেন বলে আগেই জল্পনা ছড়িয়েছিল। কারণটা, শাসকদলের সাম্প্রতিক গোষ্ঠীকোন্দল। এদিন সেই সেই জল্পনাই সত্যি হল। উদ্বোধনীতে অবশ্য অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী বুলু চিকবড়াইক, রাজবংশী ডেভেলপমেন্ট ও কালচারাল বোর্ডের চেয়ারম্যান বংশীবদন বর্মন, এনবিএসটিসির চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায়, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিনয়কৃষ্ণ বর্মন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী বলেন, ‘রাজ্য স্তরের বহু অনুষ্ঠানে আমি থাকি। কিন্তু উদ্বোধনীতে এত মানুষের উপস্থিতি সাধারণত চোখে পড়ে না।’ তবে মন্ত্রী যতই সাফল্যের কথা বলুন বিতর্ক পিছু ছাড়বার নয়। বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলেরই একাংশর অনুপস্থিতিকে নিশানা করে পার্থপ্রতিম বলেন, ‘কেউ কেউ শত ব্যস্ততার মধ্যে ভাওয়াইয়ার জন্য হয়তো সময় বের করে উঠতে পারেননি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, ভাওয়াইয়া গানের জাদু তাঁদের এই মঞ্চে টেনে নিয়ে আসবেই।’ প্রকারান্তরে তিনি নেতাদের অনুপস্থিতিকে বুঝিয়েছেন। যদিও রবীন্দ্রনাথকে নিশানা করে গিরীন্দ্রনাথ বলেন, ‘আমরা কেউ ঘরে বসে নেই। মাথাভাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী সারস্বত উৎসবে যোগ দিয়েছি। আর আমাদের কতটা ভাওয়াইয়া প্রীতি রয়েছে তার সার্টিফিকেট রবিবাবুর কাছ থেকে নিতে হবে না।’
ভাওয়াইয়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনের সময় উদয়নও সারস্বত উৎসবে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার যদি ভাওয়াইয়ার প্রতি টান থাকে তাহলে বলরামপুরে গেলেই সেটা প্রকাশ পাবে এমন ভাবাটা ভুল। দিনহাটা উৎসবে আমি একদিন ভাওয়াইয়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু সেটা আমি ঢাকঢোল পিটিয়ে বলিনি যে, আমি ভাওয়াইয়াকে কতটা ভালোবাসি। রাজবংশী সংস্কৃতি বা ভাওয়াইয়া কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না।’
সম্প্রতি কোচবিহার জেলায় তৃণমূলের বিভিন্ন বিধানসভাভিত্তিক কর্মীসভায় দলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। এখনও পর্যন্ত একটি সভাতেও কাকা-ভাইপো অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ও পার্থপ্রতিম উপস্থিত হননি। যা নিয়ে উদয়ন, সাংসদ জগদীশচন্দ্র, দলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ বারবার তোপ দেগেছেন। সেই কোন্দল রাজ্য ভাওয়াইয়ার উদ্বোধনেও বজায় রইল।