ফালাকাটা: একটা সময় শস্যশ্যামলা ছিল পশ্চিম ফালাকাটার ক্যাম্পের মোড় এলাকা। এখনও সেখানে চাষাবাদ হয়। তবে ফসল নয়, নানা ধরনের ফুলের চাষে মজেছেন এখানকার চাষিরা। যা তাঁদের নয়া আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে। হঠাৎ করে এখানকার চাষিরা ফসলের বদলে ফুলের চাষ শুরু করলেন কেন? এই প্রশ্নটা ওঠা খুবই স্বাভাবিক।
ফালাকাটার ক্যাম্পের মোড় এলাকা দিয়ে বয়ে গিয়েছে মুজনাই নদী। প্রতি বছর নদী ধীরে ধীরে গিলে খাচ্ছিল গ্রামের কৃষিজমি। বহু কৃষিজমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছিল। ফলে ফসল চাষ করেও লাভের মুখ তো দূরে থাক, নদী কখন কৃষকদের ফসলি জমি গিলে খাবে সেই আতঙ্কে থাকতেন বাসিন্দারা। এই অবস্থায় কয়েক বছর আগে ফসলের বিকল্প হিসেবে ফুল চাষকে বেছে নিয়েছিলেন এলাকার কয়েকজন চাষি। আর এখন এই ফুল চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ক্যাম্পের মোড়ের চাষিরা। শুধু তাই নয়, ফালাকাটা পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ক্যাম্পের মোড়ের ফুলচাষিদের এই সাফল্যে স্থানীয়রা তো বটেই পার্শ্ববর্তী এলাকার চাষিরাও বিকল্প চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
ক্যাম্পের মোড়ের ফুলচাষি বিষ্ণুপদ বর্মনের কথায়, ‘আমাদের এলাকাটি নীচু জায়গা। তাই পাশে থাকা মুজনাই নদী প্রতি বছর জমি গিলে খাচ্ছিল। বাধ্য হয়ে আমরা ফসলের বিকল্প হিসেবে ফুল চাষ শুরু করি। এখন ফুল চাষ করেই লাভের মুখ দেখছি।’
এবিষয়ে ফালাকাটা পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার তাপস গুহ বলেন, ‘এলাকায় অনেক চাষিই এখন ফুল চাষ করে আর্থিকভাবে সমৃদ্ধও হচ্ছেন। তাঁদের কোনও দাবিদাওয়া থাকলে অবশ্যই পদক্ষেপ করার চেষ্টা করব। উদ্যানপালন দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে চাষিদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কোনও উদ্যোগ নেওয়া যায় কি না তা বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করব।’
ক্যাম্পের মোড়ের চাষিরা জানিয়েছেন, মুজনাই নদী প্রতি বছর চাষের জমি গিলে খাচ্ছিল। বন্যায় সঠিক সময়ে ফসল ঘরে তুলতে না পেরে লোকসানের মুখই দেখতে হত বেশি। তাই কয়েক বছর আগে এলাকায় তাঁরা বিকল্প চাষের খোঁজ করতে থাকেন। অনেকেই সেসময় পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ শুরু করেন। আর এতেই মেলে সাফল্য। তারপর এলাকার অন্য চাষিরাও ফুল চাষের দিকে ঝোঁকেন।
ফুল চাষ শুরুর পর আর কাউকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন জমিতে গাঁদা, রজনীগন্ধা, জুঁই সহ আরও বাহারি ফুলের চাষ হচ্ছে। এই ফুল পাইকারি বিক্রি করেই এখন প্রত্যেক চাষিই স্বনির্ভর। এমনকি তাঁরা অন্যদেরও ফুল চাষে পরামর্শও দিচ্ছেন। চাষিদের পাশাপাশি বাড়ির মহিলারাও ফুলের মালা গেঁথে এখন স্বনির্ভর।
স্থানীয় ফুলচাষি শ্রীকান্ত সরকার বলেন, ‘আমরা মূলত ফালাকাটা, মাথাভাঙ্গায় ফুল বিক্রি করি। অনেকে এখন অসমেও ফুল পাঠাচ্ছেন। তবে কিষান মান্ডিতে ফসলের পাশাপাশি ফুল মার্কেটের ব্যবস্থা করলে উপকার হয়।’
ফালাকাটা ক্যাম্পের মোড়ের এলাকায় এখন বিঘার পর বিঘা জমিতে ফুল চাষ হয়। ফালাকাটা সহ অন্য এলাকার চাষিরাও এখন এখানে এসে ফুল চাষের পদ্ধতি শিখতে চাইছেন। এখানকার চাষিরা এখন নিজেদের জমি ছাড়াও অন্যের জমি লিজ নিয়েও ফুল চাষ করছেন। তাঁদের আর্থিক স্বনির্ভরতায় ফালাকাটার বাজারও চাঙ্গা হয়েছে বলে মত ব্যবসায়ীদের। সরকারিভাবে সাহায্য পেলে এখানকার ফুল চাষ ব্লকের অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়তে পারবে বলে মনে করছেন উদ্যানপালন বিশেষজ্ঞরা।