প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: অষ্টধাতুর তৈরি মাত্র চার ইঞ্চি উচ্চতার দেবী দশভূজার মূর্তি। সেই মূর্তির পুজো ঘিরেই দুর্গোৎসবের কটা দিন মাতোয়ারা থাকেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির নবস্থা গ্রামের বাসিন্দারা। বিগত পাঁচশো বছরেরও বেশী সময়কাল ধরে নবস্থা গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার বিশ্বাস পরিবার চার ইঞ্চির অষ্টধাতুর দেবী উমার মূ্র্তি পুজো করে আসছেন। নিজে মাহাত্মেই এলাকাবাসীর কাছে আরাধ্য দেবী হিসাবে মান্যতা পেয়ে আসছে চার ইঞ্চির এই দশভূজা।
শহর, মফস্বলের বড় বাজেটের থিম পুজো দেখা নিয়ে কোন মাতামাতি নেই নবস্থা গ্রামের বাসিন্দাদের। তারা এখন ব্যস্ত ছোট দুর্গার আরাধনায়। পুজো উপলক্ষে বিশ্বাস বাড়ির নাট মন্দির সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। নবস্থা গ্রামের বাসিন্দারা মনে করেন নিষ্ঠা ও ভক্তির মেলবন্ধনে হওয়া তাঁদের ছোট্ট দুর্গা মায়ের পুজো থিমের বড় বাজেটের পুজোর থেকেও বেশী নজরকাড়া। নবস্থা গ্রামের রাজারাম বিশ্বাসের বাড়ি লাগোয়া মন্দিরে সারা বছর অধিষ্ঠিত থাকেন চার ইঞ্চির দেবী দুর্গা। পঞ্জিকার নির্ঘন্ট মেনে কোন নির্দিষ্ট দিন বা সময় ধরে নয়, সারা বছরই নিত্যসেবা হয় অষ্টধাতুর এই দুর্গা মূর্তির। মহাসপ্তমীর দিন সকালে বিশ্বাস বাড়ির মন্দির থেকে অষ্টধাতুর দশভূজার মূর্তি নিয়ে যাওয়া হয় পরিবারের বড় নাটমন্দিরে। দেবী পক্ষের চারটে দিন নাট মন্দিরেই নিষ্ঠা সহকারে অষ্টধাতুর ছোট্ট দুর্গা মায়ের পুজো হয়। বিশ্বাস পরিবারের কোন পুরুষ এই ছোট্ট অষ্টধাতুর দশভূজা মূর্তির পুজোর সূচনা করেছিলেন তা অবশ্য জানতে পারেননি বর্তমানে পরিবারে সদস্যরা।
বিশ্বাস পরিবারের প্রবীণ সদস্য রাজারাম বিশ্বাস জানান, পাঁচশো বছরেরও বেশী সময়কাল ধরে তাঁদের বংশের সদস্যরা অষ্টধাতুর ছোট্ট দশভূজা মায়ের পুজোপাঠ করে আসছেন। বর্তমানে বংশের অষ্টম পুরুষরা পুজোর আয়োজন করছেন। পুজোর চারটে দিন লোকাচার মেনেই পুজো হয়। পারিবারিক প্রথা মেনে অষ্টমীর সন্ধিপুজোর দিন ছাগ বলিদান, নবমীর দিন ছাঁচি কুমড়ো ও কলা বলি দেবার প্রথা এখনও চালু রয়েছে।
দশভূজা দেবী মায়ের নানা মাহাত্মের কথা জানিয়েছেন রাজারাম বাবু। তিনি বলেন, ইতিপূর্বে একাধিকবার তাঁদের পরিবারের অষ্টধাতুর দশভূজার মূর্তিটি চুরি হয়ে গেলেও কোন না কোন ভাবে মূর্তিটি ফের বিশ্বাস বাড়িতে ফিরে এসেছে। ২০০৭ সালে মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়। তা নিয়ে গ্রামে হুলস্থুল পড়ে যায়। ওই সময়কালে এলাকার একটি খালে জেলেরা যখন মাছ ধরছিল তখন তাঁদের জালে দেবী মূর্তিটি উঠে আসে। পুলিশ মূর্তিটি নিজেদের হেপাজতে নেয়। পরে মেমারি ও বর্ধমান থানা ঘুরে অষ্টধাতুর দশভূজা মায়ের মূর্তি ফের মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়। পরিবারের অন্য সদস্যরা বলেন, ’তাঁদের পূর্বপুরুষরা একদা মেমারির বসতপুর এলাকায় বসবাস করতেন। ওই সময়ে এক পূর্ব পুরুষের কাঁধে বাজপাখি উড়ে এসে বসে। তার পরেই ওই পূর্ব পুরুষ স্বপ্নাদেশ পান। সেই স্বপ্নাদেশ মেনে অষ্টধাতুর চার ইঞ্চির দশভূজা মায়ের মূর্তি গড়ে পরিবারে শুরু হয় পুজো। পূজারী কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার সদস্যরা বলেন, ‘ছোট্ট দশভূজা মাকে নিয়ে এলাকাবাসীর শ্রদ্ধা ও ভক্তি ভাবের অন্ত নেই। এই ছোট্ট দশভূজা মায়ের পুজোই নবস্থা এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গা পুজো। ঐতিহ্য পরম্পরা মেনে নবমীর দিন ১০৮টি পদ্ম ফুলের মালা দেবী মাকে পরানো হয়। বিধান মেনে বিজয়ার দিন এলাকার সকলে এখনও অপরাজিতা ফুলের তাগা ধারণ করেন। দশমীর পুজো শেষ হলে দশভূজার মূর্তি নাট মন্দির থেকে বাড়ি লাগোয়া মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। পুরোহিত বলেন, ‘বিশ্বাস বাড়ির পুজোয় দশমীর দিন সিঁদুর খেলার কোন চল নেই।’
হরিশ্চন্দ্রপুর: ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল মালদার (Malda) হরিশ্চন্দ্রপুরের এক ব্যক্তির (Migrant Worker…
কাঁথি: এক বিজেপি কর্মীর কান কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠল। পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের ঘটনা। আক্রান্তের নাম…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ১৭০ কোটি টাকা! মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) নান্দেড়ে আয়কর দপ্তরের অভিযানে উদ্ধার হল…
মেটেলি: নির্দিষ্ট সময়ে বেতন (Salary issue) না মেলায় চা বাগানের (Tea garden) স্টাফ ও সাব…
শমিদীপ দত্ত, বাগডোগরা: এশিয়ান হাইওয়ে হওয়ার পর থেকেই ভোল বদলেছে গোটা এলাকার। আন্তঃরাষ্ট্রীয় সীমান্তের সঙ্গে…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: লরির সঙ্গে বাসের সংঘর্ষে দাউদাউ করে জ্বলে উঠল দুটি গাড়িই। ঘটনায় …
This website uses cookies.