রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫

Cooch Behar | বড়ি আছে, স্বাদ-গন্ধ আর নেই

শেষ আপডেট:

কোচবিহার: বড়ি নিয়ে বাঙালির আবেগ চিরকালীন। শুক্তো হোক বা পাঁচমিশালি সবজির ঘণ্ট, খেতে বসে পাতে বড়ির প্রত্যাশা থাকেই। কিংবা বড়িভাজা দিয়ে সাবাড় হয়ে যায় গরম গরম এক থালা ভাত।

একসময় শীতকালে মা-ঠাকুমারা শিলনোড়ায় মশুর, মটর বা বিউলির ডাল বেঁটে তাতে কালোজিরে দিয়ে তৈরি করতেন বড়ির মিশ্রণ। তারপর সাদা ধবধবে পাতলা ধুতিতে ছোট ছোট বড়িতে সেজে উঠত বাড়ির উঠোন কিংবা ছাদ। তিন থেকে চারদিন লাগত বড়ি শুকোতে। খুব কড়া রোদে বড়ি ভেঙে যায়। মিঠে রোদ্দুরই বড়ির জন্য আদর্শ। বড়ি পাহারা দেওয়াও ছিল একটা পর্ব। পাখিদের দৌরাত্ম্য বা বৃষ্টির হাত থেকে বড়ি বাঁচাতে কাজে লাগানো হত বাড়ির বাচ্চাদের।

কালের বিবর্তনে, বড়ি দেওয়ার সেই রেওয়াজ এখন আর অধিকাংশ বাড়িতে নেই। বাজারের বড়ির দিকে ঝুঁকেছে আমবাঙালি। আগে বড়ি কিনে খাওয়ার এত চল ছিল না। কোচবিহারের বাজারে এখন সারাবছরই বড়ি সুলভ। বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বানানো নানা রঙের নানা স্বাদের বড়ি। রাসমেলায় আচারের দোকানেও বড়ি বিক্রি হয়। প্যাকেটজাত হয়ে পাড়ার মোড়ের মুদি দোকানেও বড়ি দৃশ্যমান।

নিজে কোনও দিন বড়ি না দিলেও, ঠাকুমার দেওয়া বড়ির কথা এখনও মনে পড়ে কোচবিহারের শিক্ষিকা মঞ্জুশ্রী ভাদুড়ির। স্মৃতির ঝুলি হাতড়ে তিনি বললেন, ‘ঠাকুমা কলাই ডালের বড়ি করতেন। আগের দিন ডাল ভিজিয়ে রাখতেন। বড়ি দেওয়া দেখতে কী যে ভালো লাগত, ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। ভাইবোনরা অবাক হয়ে দেখতাম। শুধু দেখা নয়, খাওয়ারও আনন্দ ছিল। আজকাল বাজার থেকে কেনা বড়ি খাই। কিন্তু ঠাকুমার হাতের সেই স্বাদ এই বড়িতে কোথায়?’

মেশিনে তৈরি বড়ির চেয়ে আজও অবশ্য হাতে তৈরি বড়ির চাহিদা বেশি। দেশবন্ধু মার্কেটের সবজি ব্যবসায়ী শ্যাম কুণ্ডু জানালেন, এক কেজি ‘খাঁটি’ বড়ির দাম আড়াইশো টাকা। খাঁটি এই অর্থে, ওই বড়িতে ডাল ব্যতীত অন্যকিছু মেশানো থাকে না। আবার দুশো টাকা কেজির বড়িও পাওয়া যায়।

বিয়ের আগে পারিবারিক ব্যবসা সূত্রে বড়ি দেওয়ায় হাতেখড়ি হয়েছিল কামেশ্বরী রোডের গীতা সাহার। তাঁর কথায়, ‘মশুর ডালের বড়, ছোট- দু’ধরনের বড়ি দিতাম। ছোট বড়িকে বলতাম ফুলবড়ি। মটর ডালের বড়িও দু’রকম হত। মাষকলাই ডালের বড়িতে কালোজিরে বা হিং দেওয়া হত।’ গীতা এখন আর নিজের হাতে বড়ি দেন না। বললেন, ‘উৎসাহ পাই না। আগে মা-বোন সবাই মিলে করতাম। বড়ি তৈরি বেশ খাটুনির কাজ। এখন সবাই ব্যস্ত। বাজারের বড়িই খাই।’

বড়ির নিজস্ব গন্ধের গল্প শোনালেন কোচবিহারের ভেনাস স্কোয়ারের বেলা দত্ত। তিনি বলেন, ‘বড়ি ভাজলে সারা বাড়ি গন্ধে ম-ম করত। আমার স্বামী বড়ি খেতে খুব ভালোবাসেন। বাজারের বড়িতে হাতে তৈরি বড়ির স্বাদ পাই না। বড়ি দেওয়া সহজসাধ্য ছিল না। আগের দিন থেকে প্রস্তুতি শুরু হত। সারারাত ডাল ভিজিয়ে রাখা হত। পরের দিন বড়ি দেওয়ার আগে শুদ্ধ হয়ে প্রথমে ভেজানো ডাল বেঁটে নেওয়া। তারপর ডালটাকে খুব করে হাত দিয়ে ফেটাতে হত। ফেটানো হয়ে গেলে জলের পাত্রে একটু ফেলে দেখতে হত ভেসে ওঠে কি না। ভেসে উঠলে ফেটানো ডাল দিয়ে একটা পাতলা সাদা কাপড়ের উপর ছোট ছোট করে বড়ি দেওয়া হত।’

Mistushree Guha
Mistushree Guhahttps://uttarbangasambad.com/
Mistushree Guha is working as Sub Editor. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Online. Mistushree is involved in Copy Editing, Uploading in website.

Share post:

Popular

More like this
Related

Harishchandrapur | প্রশ্নের মুখে গুণমান! সরকারি স্কুলের ইউনিফর্ম তৈরিতে দুর্নীতির অভিযোগ, তদন্তের নির্দেশ জেলাশাসকের  

হরিশ্চন্দ্রপুর: রাজ্য সরকারের তরফে সরকারি স্কুলের প্রথম থেকে অষ্টম...

Kumarganj | কুমারগঞ্জে ফের দুঃসাহসিক চুরি, পর পর দুটি শোরুমে তাণ্ডব দুষ্কৃতীদের

কুমারগঞ্জ: কুমারগঞ্জে অব্যাহত চুরির দাপট। একের পর এক চুরির...

Kishanganj | কিশনগঞ্জে বাজেয়াপ্ত প্রচুর সংখ্যাক জাল লটারির টিকিট, মূল অভিযুক্ত পলাতক  

কিশনগঞ্জ: কিশনগঞ্জে সক্রিয় জাল লটারির টিকিটের অবৈধ কারবার। শুক্রবার...

Jalpaiguri | দুই গোষ্ঠীর ঝামেলা, লাটে উঠল করলাভ্যালি চা বাগানের কাজকর্ম

জলপাইগুড়ি: তৃণমূলের শাসক গোষ্ঠি ও এস সি এস টি...