বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫

যে ভোটে লাইন-স্লোগান নেই, ছুটিও নেই

শেষ আপডেট:

 

  • রুমি বাগচী

আরেকটু হলেই ভোটের কথা ভুলে যাচ্ছিলাম।

যদিও আমেরিকায় সবসময়ই নভেম্বরের এক তারিখের পর প্রথম মঙ্গলবারেই ভোট হয়। কিন্তু  চারদিকে একটাও দেওয়াল লিখন নেই, ভাষণ–স্লোগানও নেই, ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

ভোটের প্রচার বলতে অডিটোরিয়ামে ভোটপ্রার্থীদের মধ্যে ডিবেট। আর কিছু র‌্যালি।  প্রথমে নিজের দলের মধ্যে ডিবেট করে মনোনয়ন পাওয়া। তারপর বিপক্ষের সঙ্গে। এই ডিবেটের মধ্যে দিয়েই যা কিছু প্রচার।

ভোটের আগে পোস্টে বাড়িতে একটি নকল ব্যালট আসে। ব্যালট একটা চটি বই-এর মতো। কারণ একসঙ্গে প্রায় পনেরো-ষোলোটা ভোট দিতে হয়। প্রেসিডেন্ট, সেনেটর, গভর্নর নির্বাচন ছাড়াও ম্যারিজুয়ানাকে আইনসম্মত করা উচিত কি না, স্কুল সিস্টেমে কোনও পরিবর্তন প্রয়োজন কি না, এমনকি কোনও বিশেষ গাছ কাটা উচিত কি না-  এই সব কিছুই ব্যালটে থাকে। এতগুলো ভোট সময় নিয়ে মনস্থির করার জন্য এই ‘প্র্যাকটিস ব্যালট’ বাড়িতে আসে। ওই ব্যালটেই ভোটটা দিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে আসল ব্যালটে কপি করে দিই ।

ভোটে কোনও ছুটি নেই। অফিসে যাওয়ার আগে অথবা পরে অথবা লাঞ্চ ব্রেকে ভোট দিতে হয়।  প্রতিবারই ভোট দিতে এসে মনে হয়  এ কেমন নীরব, নিষ্প্রাণ ভোট পর্ব! স্লোগান নেই… পোস্টার নেই… রাত জেগে দেওয়াল লিখন নেই! সবচেয়ে বড় কথা, ভোট উপলক্ষ্যে সবার সঙ্গে আড্ডা দেওয়াও  নেই।

 ফাইভ স্টার হোটেলের মতো একটি বিল্ডিংয়ের কাচের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই রিসেপশনিস্ট ওয়েলকাম জানাল। লাইন তো স্বপ্নাতীত। আমি ছাড়া কখনও একজন দুজনের বেশি কাউকে দেখিনি। তবু সোফা, টেবিল, ম্যাগাজিন, পানীয় জল, সুদৃশ্য বাথরুম– সব আছে।

তবু শিলিগুড়ির ভোট-উৎসবের কথা ভেবে মন স্মৃতিবিধুর হয়। হ্যাজাকের আলোয় রাত জেগে দেওয়াল লিখন। অটোতে স্লোগান দিতে দিতে সারা শিলিগুড়ি ঘোরা।

এইদিন পাড়ার সমস্ত মানুষকে দেখতে পাওয়া যেত। যে ছেলেটি চাকরি করতে অন্য শহরে গেছে, সেও আজ ছুটি নিয়ে এসেছে। আর যে বৌটির সদ্য বিয়ে হয়েছে, সে আজ ভোট প্রাঙ্গণে  দাঁড়িয়ে গল্প করছে।  যদি ভিড় না থাকত, দু’মিনিটে ভোট দিয়ে বৌটিকে বাড়ি ফিরতে হত, তাহলে কি তাঁর জীবনের আলো একটু কমে যেত না!

আর পাড়ার যে মেয়েটি সদ্য বিয়ে হয়ে অন্য পাড়ায় চলে গিয়েছে, কিন্তু তার নামটি রয়ে গিয়েছে এই পাড়ায়, সেও আজ এসেছে ভোট দিতে। যদি ভিড় হওয়ার এই মুল্যবান অজুহাতটি না থাকত, তাহলে তার জীবন থেকে একটি রঙিন দিন কি হারিয়ে যেত না!

সারি সারি কিউবিকলের একটিতে গিয়ে টাচ স্ক্রিন কম্পিউটারে নির্বাচন করে প্রিন্টআউট নিয়ে পাশের একটি মেশিনে ঢুকিয়ে দিলাম । চাকরির পরীক্ষাতে যেমন স্ক্যানট্রন কম্পিউটারে চেক করা হয়, তেমন-ই। ভোট দিয়ে  ‘আই ভোটেড’ স্টিকার নিয়ে ফিরে আসতে সাত মিনিট লাগল।

দেখে অবাক হলাম যে স্টিকারে অন্য ভাষার সঙ্গে হিন্দিও আছে ‘ম্যায়নে মতদান কিয়া’ — আমরা আছি বলে। এভাবেই কেউ কেউ ভালোবাসা আদায় করে নেয়।

(লেখক শিলিগুড়ির মেয়ে। বর্তমানে লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দা)

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.

Share post:

Popular

More like this
Related

সামাজিক ঐক্য দৃঢ় করার উৎসব

  মনোমিতা চক্রবর্তী হেমন্তের সোনালি ধানের খেত জানান দিচ্ছে বাংলার...

সময়ের তুলনায় ১০০ বছর এগিয়ে

  ভি গৌরব ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকর ও সংগীতস্রষ্টা সলিল চৌধুরী...

প্রকৃতির সিম্ফনিতে প্রাণের প্রথম সুর

জয়ন্ত চক্রবর্ত্তী কোষের ভেতরে কীভাবে প্রাণের উৎপত্তি?— এ যেন আবহমানকালজুড়ে...

উপাচার্য সংকট : রাজ্যে নতুন রেকর্ড

দেবদূত ঘোষঠাকুর এখন বোধহয় নতুন রেকর্ড তৈরি করা কিংবা রেকর্ড...