ফালাকাটা: ফালাকাটা কৃষক বাজারে বৃহস্পতিবার বেগুনের মূল্য ছিল কেজি প্রতি ৩ টাকা। দুই কুইন্টাল বেগুন পাইকারি বিক্রি করে পকেটে এল মাত্র ৬০০ টাকা। মুনাফা তো দূরের কথা, ফসল তোলা থেকে বাজারে নিয়ে যেতে নিজের গাঁট থেকেই ১৫০ টাকা বেশি গুনতে হল রাইচেঙ্গার চাষি বাবুল শীলকে। তাই তিনি বেগুনখেত নষ্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেবল বাবুল একাই নন, ইতিমধ্যে ফালাকাটা ব্লকের বহু চাষি দাম না পেয়ে বেগুনখেত নষ্ট করেছেন।
ফালাকাটা ব্লকের কালীপুর, রাইচেঙ্গা, শিশাগোড়, বংশীধরপুর, আসাম মোড়, পারঙ্গেরপার, ময়রাডাঙ্গা, এলাকায় সবজির দাম নিয়ে চিন্তায় চাষিরা। শীতের শুরুতে অবশ্য সবজির দর ভালোই ছিল। কিন্তু তখন অধিকাংশ চাষির সবজির ফলন হয়নি। প্রথমদিকে যাঁরা ফসল তুলতে পারেন, তাঁরাই লাভবান হন। শীতের মাঝামাঝি সময়ে অধিকাংশ চাষির সবজি ওঠা শুরু হয়। আর তখন থেকেই ধাপে ধাপে দাম কমতে থাকে। এখন সেই দাম এতটাই নেমেছে যে, বাজারে গিয়ে চাষিদের লাভের বদলে ক্ষতি হচ্ছে। ইতিমধ্যে চাষিদের একাংশ ফুলকপি ও বাঁধাকপি গোরুকে খাইয়ে দিয়েছেন। এবার বেগুনের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
কৃষি দপ্তর অবশ্য বলছে, অধিক ফলন ও রপ্তানি কমে যাওয়াতেই সবজির দাম কমছে। ফালাকাটা ব্লক সহ কৃষি অধিকর্তা সুপ্রিয় বিশ্বাসের কথায়, ‘ফুলকপি ও বাঁধাকপির মতো পরিস্থিতি হয়েছে বেগুনের ক্ষেত্রেও৷ প্রথম দিকে শীত কম পড়ায় সবজির ফলন কম হয়েছিল। তখন চাহিদা ছিল সর্বত্র। তাই দাম বেশি ছিল। কিন্তু মাঝামাঝি সময় শীত বেশি পড়ায় বেগুনের ফলন বেড়েছে। এদিকে বাইরে রপ্তানি কমেছে। এভাবে অধিক ফলন ও রপ্তানি কমায় বেগুনের দাম পড়ে যাচ্ছে।’
সাধারণ চাষিরা সবজির দাম কমা নিয়ে হতাশ। রাইচেঙ্গার বাবুল শীল এক বিঘা জমিতে বেগুনের চাষ করেছিলেন। এদিন দুজন মহিলা শ্রমিক লাগিয়ে বেগুন ছিঁড়তে মজুরি দিতে হয়েছে চারশো টাকা। সেই বেগুন প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরতে হয়। সেই ব্যাগ কিনতে লাগে একশো টাকা। টোটো ভাড়া লাগে ২০০ টাকা। আর ফালাকাটা কৃষক বাজারে ওজন করাতে দিতে হয় ৫০ টাকা। এভাবে তাঁর খরচ হয় ৭৫০ টাকা। আর এদিন পাইকারি বাজারে বেগুনের দাম ছিল প্রতি কেজি তিন টাকা। বাবুল বলেন, ‘পরপর কয়েকদিন বাজারে বেগুন বিক্রি করতে গিয়ে এভাবে ঘাটতি হল। তাই এবার বেগুনখেত নষ্ট করে ভুট্টা লাগাব।’ বেগুনের ঘাটতি ভুট্টা চাষে উঠে আসবে বলে তাঁর আশা।
কালীপুর গ্রামে লঙ্কেশ্বর শিকদারও এক বিঘা জমিতে বেগুনের চাষ করেছেন। এভাবে ঘাটতি হচ্ছে বলে তিনি কয়েকদিন ধরে আর বেগুন ছিঁড়ছেন না। বংশীধরপুর গ্রামের সুকুমার সরকার নিজের বেগুনখেতে শ্রমিক লাগাচ্ছেন না। পরিবারের লোকজন দিয়ে বেগুন ছিঁড়ছেন। তাতেও লাভ হচ্ছে না।