ধূপগুড়ি : জঙ্গি গোষ্ঠী থেকে কেএলও পুরোপুরি রাজনৈতিক দল গঠনের পথে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। কামতাপুরি এই উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর প্রেস বিবৃতিতে সেই আভাস রয়েছে। সম্প্রতি এই গোষ্ঠী নিজেদের কেন্দ্রীয় কমিটির পুনর্গঠন করেছে। এই পুনর্গঠন দল সংগঠিত করার লক্ষ্যে বলে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। সম্ভবত সেকারণে শুধু রাজবংশী নয়, অন্য জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকছে নতুন শীর্ষ কমিটিতে। এছাড়া এই প্রথম, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে মহিলাদের।
ইতিপূর্বে উত্তরবঙ্গ সংবাদেই প্রথম খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, এই প্রথম মহিলাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছে তারা। সদ্য গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছেন দুই মহিলা। সংগঠনের নারীকল্যাণ সচিব ও সহ সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মতেশ্বরী অধিকারী এবং উর্বশী কোচকে। গত ১৫ থেকে ২০ জুন কেএলওর সাধারণ সভায় ৩২ জনের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
ছয়দিনের এই সাধারণ সভা উত্তর-পূর্ব ভারত লাগোয়া মায়ানমারের সীমান্ত এলাকার এক গোপন ডেরায় হয়েছে বলে ভিন্ন সূত্রে খবর। ওই সভায় কয়ে দফায় তিনশোর বেশি সক্রিয় কেএলও নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রচার দপ্তরের সহ সচিব দাওসার লাঙকাম কোচ এক বিবৃতিতে সংগঠনের বদলে পার্টি শব্দটির উল্লেখ করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমাদের দলীয় তত্পরতা বৃদ্ধি ও কামতাপুরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিই।
এর ফলে জল্পনা শুরু হয়েছে যে, পার্টি গঠনের মাধ্যমে সম্ভবত মূলস্রোতের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা করছে কেএলও। ইতিমধ্যে রাজ্য গঠনের লক্ষ্যে সংগঠনটি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাতে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে বলে কেএলও সূত্রে খবর। সেই আশাতেই দল গঠনের প্রক্রিয়া কেএলও শুরু করল বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে জীবন সিংহই সভাপতি হিসেবে রয়েছেন। কৈলাস কোচ মহাসচিব ও নৃপেন্দ্রনারায়ণ কোচকে সহকারী মহাসচিব করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুভাষ প্রধানকে। সংগঠনের সামরিক বাহিনীর উপসচিব মনোনীত করা হয়েছে দুই স্বঘোষিত ক্যাপ্টেন সূর্য কোচ ও হরেন্দ্র কোচকে। অর্থ উপসচিবের যৌথ দায়িত্ব পেয়েছেন মদন রাই এবং অনির্বাণ কোচ। বিদেশ এবং সংগঠন সচিব করা হয়েছে যথাক্রমে পাভেল কোচ এবং নরেন কোচকে। সহকারী সংগঠন সচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন আনারুল হক। বাণিজ্য সচিব এবং তাঁর সহকারীর দায়িত্ব বর্তেছে মহেশ মণ্ডল এবং তাপস চক্রবর্তীর ওপর।
শ্রম সচিব মনোনীত হয়েছেন মার্টিন কুজুর, সংস্কৃতি সচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন অসীম রাভা। পদাধিকারীদের পদবি থেকে স্পষ্ট, কোচ-রাজবংশী জনগোষ্ঠীর বাইরেও ধর্মবর্ণনির্বিশেষে আদিবাসী, রাভা থেকে শুরু করে নস্যশেখ, এমনকি বর্ণহিন্দু সমাজের প্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন। যদিও পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি, সাংগঠনিক নিয়মে কেএলও পদাধিকারীদের আসল নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হয়।
এ রাজ্য বিশেষ করে অতীতে শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলায় এই মুহূর্তে কেএলওর তেমন কেউ নেই বলে পুলিশের দাবি ছিল এতদিন। তবে সংগঠনটির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির পদাধিকারীদের নাম প্রকাশের পর খোঁজখবর শুরু করেছেন পুলিশ ও গোয়েন্দাকর্তারা।
আরও পড়ুন : মমতাকে শ্রদ্ধা, তবে কেন্দ্রের সঙ্গেই আলোচনা চান জীবন সিংহ