প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার: ‘গোপনে মদ ছাড়ান’ বা ‘মদ্যপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর’। সিনেমার শুরুর আগে হোক বা রাস্তাঘাটে। জায়গায় জায়গায় এইরকম বিজ্ঞাপন যতই থাকুক মদের গ্লাসে জীবনের দুঃখ বা আনন্দ ডোবানো চলছেই। বিশেষ করে দুর্গাপুজোর সময় যেন এই অভ্যাস খানিক বেড়েই যায়। তখন চারিদিকে একটাই কথা ‘আর একটু বেশি মদ খাব না আমরা? খাব না আমরা আরও একটু বেশি মদ?’ শেষ কয়েক বছরে রাজ্যের নিরিখে পুজোর সময় মদ বিক্রির পরিসংখ্যান যেন এই কথাকেই খানিক প্রমাণ করে। আলিপুরদুয়ারে এবছরেও তার ব্যতিক্রম হল না।
গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় প্রায় তিনগুণ বেশি মদ বিক্রি হয়েছে বলে খবর। মহালয়ার দিন থেকে ধরলে সেই পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা। এবছর মদ বিক্রি হয় প্রায় তিন কোটির কাছাকাছি। যা গত বছরের তিনগুণ বলে আবগারি দপ্তর সূত্রে খবর। এই বিষয়ে আবগারি দপ্তরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট উগেন শেওয়াংকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এবছর শহর ও শহরতলির লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান ছাড়াও বার থেকে রেকর্ড পরিমাণ মদ বিক্রি হয়েছে আলিপুরদুয়ারে। মদ পাওয়া গিয়েছে খোলাবাজারেও। তবে বাইরে থেকে বেআইনিভাবে আসা মদ আটকে দেওয়ার ফলে মদ বিক্রির রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে বলে আবগারি দপ্তর মনে করছে। প্রতিবছর দেখা যায় পুজোর মরশুমে ভুটান ও অসমের রুট ধরে মদের কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন সময় ভুটান থেকে মদ জয়গাঁর রুট ধরে আলিপুরদুয়ারে প্রবেশ করে। একই রকমভাবে অসম থেকে মদ বারবিশা হয়ে ৩১সি জাতীয় সড়ক ধরে শহর সহ বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হয়। অসম ও ভুটান মদের দাম তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় সেই সব মদের চাহিদাও প্রচুর। প্রতিবছরই পুজোর সময় সীমান্ত এলাকায় এই সংক্রান্ত বিষয়ে নজরদারি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় প্রশাসনের কাছে। এছাড়া প্রান্তিক ও চা বাগান এলাকাতেও দেখা যায় চোলাই মদের রমরমা।
কিন্তু এবার পুজোর এক মাস আগে থেকেই এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে কড়া নজরদারি শুরু করা হয় আবগারি দপ্তরের তরফে। আলিপুরদুয়ার শহর সহ প্রায় প্রতিটি ব্লকেই দুটি করে পেট্রলিং টিম তৈরি করে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ছাড়াও লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকানে নজরদারি চালানো হয়েছিল। মেঘালয়, অরুণাচলপ্রদেশ থেকে মদ আলিপুরদুয়ার হয়ে বিহার ও গুজরাটে পাচার হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আবগারি দপ্তরের তৎপরতায় সেই পাচার আটকানো সম্ভব হয়। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গাতে নজরদারি চালিয়ে চোলাই মদ ও মদ তৈরির উপকরণ বাজেয়াপ্ত করে আবগারি দপ্তর।