রামপ্রসাদ মোদক, রাজগঞ্জ: এ যেন কেঁচো খুঁড়তে কেউটে! জলপাইগুড়ি সদর মহকুমা শাসক তমোজিৎ চক্রবর্তীর নির্দেশে শনিবার গজলডোবা (Gajoldoba) উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বেদখল হওয়া ৬৩ ডেসিমাল জমি পরিদর্শন করে ফিরে আসার সময় সেতুর দক্ষিণদিকের আরেকটি খাসজমি বেদখল (Land Encroachment) হয়ে যাওয়ার অভিযোগ মেলে। জমিদখলের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে শিলিগুড়ি (Siliguri) পুরনিগমের কাউন্সিলার রঞ্জন শীলশর্মার (Ranjan Shil Sharma)। রঞ্জন অবশ্য দাবি করেন, জমিটি তিনি একজনের কাছ থেকে কিনেছিলেন। তবে জমি সংক্রান্ত কোনও কাগজ বা দলিল তাঁর কাছে নেই।
এদিন গজলডোবা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বেদখল জমি পরিদর্শনে যান কর্তৃপক্ষের ভাইস চেয়ারম্যান তথা রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায় (Khageswar Roy), বিডিও প্রশান্ত বর্মন, বিএলএলআরও, ভোরের আলো থানার পুলিশ আধিকারিক এবং এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। ৬৩ ডেসিমাল জমির মালিক শিলিগুড়ির বাসিন্দা বিপ্লব সাহা বলেন, ‘জমির পাট্টা দেখে আমি জমিটা কিনেছি। তবে আমার কাছে কোনও কাগজ নেই।’ ফেরার সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গজলডোবার ঝুলন্ত সেতুর দক্ষিণদিকে প্রায় ৮ বিঘা জমি দেখিয়ে দেন। অভিযোগ, সেই জমিটিও বেদখল হয়ে গিেয়ছে। জমির কেয়ারটেকার জানান, জমিটি শিলিগুড়ি পুরনিগমের কাউন্সিলার রঞ্জন শীলশর্মার। কেয়ারটেকারের কথায়, ‘আমি পাঁচ বছর ধরে এই জমির দেখভাল করছি। এই এলাকায় সব জমি খাসজমি বলে আমি জানি। তবে জমির কাগজ রয়েছে কি না বলতে পারব না।’ ২৫ বছর ধরে বসবাস করেও জমির পাট্টা পাননি এলাকাবাসী। এদিকে, রঞ্জন শিলিগুড়িতে থেকেও ৮ বিঘা জমির পাট্টা পান কী করে, প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে রঞ্জনের দাবি, ১৯৮৭ সালে তিনি একজনের দখল সত্ত্বেও ৮ বিঘা জমি কিনেছিলেন। জমিটা খাসজমি। তিনি একা নন, শিলিগুড়ির আরেক কাউন্সিলার দুলাল দত্তও সেখানে জমি কিনেছেন। তাঁর কথায়, ‘গজলডোবা প্রোজেক্ট হওয়ার সময় প্রায় দুই বিঘা জমি ছেড়েছি। কিন্তু তার জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ চাইনি। সরকারের কাছে জমিটির লিজ চেয়েছিলাম, সেটাও পাইনি।’ জমির কাগজ রয়েছে কি না জিজ্ঞাসা করতে তিনি বলেন, ‘জমির কোনও দলিল বা পাট্টা খতিয়ান আমার কাছে নেই।’
পরিদর্শক দলটি শেষে যায় গজলডোবার মনসা মন্দির এলাকায়। সেখানে বিপ্লব বালা নামে এক ব্যক্তিকে কাগজপত্র নিয়ে বিএলএলআরও অফিসে যেতে বলেন রাজগঞ্জের বিডিও। তাঁর বাড়ির সামনে থাকা ঘরটি ভেঙে দিতে বলেন। বিপ্লবের অভিযোগ, ‘আমি বিজেপি করি বলে আমার এখানে এসে একথা বলা হয়েছে। গোটা পাড়ার কারও কাছে জমির কাগজ নেই। তাঁদেরকে কেন বলা হল না? আমি ২৫ বছর ধরে এখানে সংসার নিয়ে বসবাস করছি।’
রঞ্জনের বিরুদ্ধে সরকারি জমি দখলের অভিযোগ নিয়ে গজলডোবা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যনির্বাহী আধিকারিক তথা মালবাজারের মহকুমা শাসক শুভম কুন্দল বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান। রাজগঞ্জ বিএলএলআরও সুখেন রায়ও দখলকৃত জমি সমীক্ষা করে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেন। বিধায়ক খগেশ্বর রায় জানান, মহকুমা শাসকের নির্দেশে বেদখল হওয়া ৬৩ ডেসিমাল জমি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সদর মহকুমা শাসকের নির্দেশমতো সোমবার তাঁরা রিপোর্ট পেশ করবেন। তবে সরকারি জমি যেই দখল করুক না কেন রেয়াত করা হবে না। তাঁর সংযোজন, ‘তবে শুনেছি ওখানে বিজেপি নেতা তপন রায়ও হোটেল করেছেন।’