Breaking News

‘চলমান শবাগার’, রেল রিপোর্ট নিয়ে কটাক্ষ তৃণমূল কংগ্রেসের

নয়াদিল্লি: বালাসোরে করমণ্ডল দুর্ঘটনা নিয়ে গত সপ্তাহে বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি(সিআরএস)।রিপোর্টে জানা গেছে একাধিক স্তরে ত্রুটির জন্য ঘটেছে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা, যার জেরে প্রাণ হারিয়েছেন ২৯৩ জন, গুরুতর আহত হন কয়েক হাজারের বেশি মানুষ। ‘সিআরএস’ রিপোর্টকেই হাতিয়ার করে এবার কেন্দ্রীয় সরকার তথা রেল মন্ত্রকের বিরুদ্ধে তোপ দাগল তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার, সিআরএস-এ বর্ণিত রেলের পরিকাঠামো এবং বুনিয়াদি স্তরে ত্রুটিবিচ্যুতির প্রসঙ্গে সরব হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা ডেরেক ও’ব্রায়েন জানান, ‘ভারতীয় রেল ক্রমশ চলমান শবাগারে পরিণত হয়েছে।’ এক্ষেত্রে সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে তাঁর অভিযোগ, ‘যাত্রী পরিষেবা ও সুরক্ষার চাইতে কেন্দ্রীয় সরকারের সস্তার প্রচারে গুরুত্ব দেওয়ার ফল হল এই দুর্ঘটনা।’ পাশাপাশি রেল পরিষেবার মান উন্নয়নের স্বার্থে বিরোধী দলীয় নেতৃত্বের দেওয়া পরামর্শ বরাবর অগ্রাহ্য করা প্রসঙ্গে সরকারপক্ষের সমালোচনা করেন তিনি।

প্রসঙ্গত গত সপ্তাহে রেলবোর্ডে জমা পড়েছে বালাসোর দুর্ঘটনা নিয়ে কলকাতাস্থিত দক্ষিণ পূর্ব রেলের কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি এ এম চৌধুরীর ৪০ পাতার দীর্ঘ রিপোর্ট, যা নিয়ে ইতিমধ্যে তুমুল শোরগোল পড়েছে রাজনৈতিক মহলে। রিপোর্টে বর্ণিত ‘একাধিক এবং বহুমুখী ত্রুটি’র কথা, যার মধ্যে পাওয়া গেছে যে তারের ভিতরে ভুল লেবেলিং লেভেল-ক্রসিং লোকেশন বক্স বছরের পর বছর ধরে সনাক্ত করা যায়নি ও শেষপর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলাকালীন ভুলভ্রান্তির কারণে দুর্ঘটনা হয়েছে। রিপোর্টে এও উল্লেখ রয়েছে যে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিলে এই ট্র্যাজেডি এড়ানো যেত। রেলবোর্ড চেয়েছিল, এই মুহূর্তে সিবিআইয়ের পৃথক তদন্ত চলছে বালাসোরে, সেই রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত সিএসআর এর এই রিপোর্ট জনসমক্ষে যাতে না আসে তার জন্য নেওয়া হয় বিশেষ বন্দোবস্তও। কিন্তু রেলভবন থেকেই রিপোর্ট ‘লিক’ হওয়ায় ঘরেবাইরে সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ঘটনার জন্য প্রাথমিক ভাবে সিগন্যালিং বিভাগ দায়ী, তাছাড়া স্টেশন মাস্টার, যিনি এই অপারেশন বিভাগের অংশ, সিগন্যালিং কন্ট্রোল সিস্টেমের ‘অস্বাভাবিক আচরণ’ সনাক্ত করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্যও নাম দেওয়া হয়েছে রিপোর্টে।

রিপোর্ট অনুসারে, সাইটের সিগন্যালিং কর্মীরা বলেছিলেন যে দুর্ঘটনার দিন লেভেল ক্রসিংয়ে ‘বৈদ্যুতিক উত্তোলন বাধা’ প্রতিস্থাপনের কাজ চালানোর সময় তাদের টার্মিনালে ভুল অক্ষর লেখার মতো ‘অসঙ্গতিগুলি’ দ্বারা বিভ্রান্ত করা হয়েছে, এবং সার্কিট যা ‘পয়েন্ট’ (মোটর চালিত অংশ যা একটি ট্রেনকে এক ট্র্যাক থেকে অন্য ট্র্যাকে গাইড করে)এর অবস্থান দেখায় তা অতীতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। সিএসআর-এর রিপোর্টে জানা গেছে, করমণ্ডলের স্পিডোমিটার খতিয়ে দেখা গেছে তা ১২৮ কিমি/ ঘন্টা থেকে হঠাৎই শূন্যে নেমে আসে। এর অর্থ আচমকা হওয়া দূর্ঘটনা। দুর্ঘটনার আগে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়নি, সেক্ষেত্রে ট্রেনের গতিবেগ কমে যেতে পারত। পরবর্তীতে লোকো পাইলট, সহায়ক লোকো পাইলট ও অন্য রেলকর্মীদের বয়ান অনুযায়ী ইউপি লুপ লাইনের অন্তর্গত সিগনাল ১৭এ ও ১৭বি’র মধ্যে ত্রুটির খবর চূড়ান্ত৷ এর জেরেই হয় দূর্ঘটনা।

তবে রিপোর্ট জানাচ্ছে, ট্রেনে প্রয়োজনীয়, সুরক্ষাবিষয়ক নানা ছোট বড় নজরদারি চলে রেলের উদ্যোগে, তাতে কোনও ফাঁকফোকর পাওয়া যায়নি৷ এমনকি দুর্ঘটনার দিন চলে ‘ট্রিপ ইনস্পেকশন’, তাতেও পাওয়া যায়নি কোনও ত্রুটিবিচ্যুতি। এমনকি দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনগুলির কোচও ছিল না বিশেষ পুরনো। ট্রেন ট্র‍্যাক বা রোলিং স্টক থেকেও এই দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে রিপোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, বিভিন্ন স্তরে লেভ সিগন্যালিংয়ে ত্রুটির কারণে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। অতীতেও বাহানাগা বাজার স্টেশনে ও খড়গপুরে সিগন্যালিং এর মারাত্মক ত্রুটি ধরা পড়ে। ২০১৮ সালে এই স্টেশনের কাছে ‘নর্থ সিগন্যালিং গুমটি’ থেকে ‘১৭ এনডব্ল্যুকেআর’ সার্কিট ‘এফ ১৩-১৪’ টার্মিনাল থেকে সরানো হয় ‘এফ২৩-২৪’এ, রেলের ‘এসওপি’ মান্য না করেই। মূলত সিগন্যালিং সার্কিটে দেখা যায় সমস্যা৷ সিগন্যাল সার্কিটে ত্রুটির জন্য করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে লুপ লাইনে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়, সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল মালগাড়িটি, যার জেরে এই দুর্ঘটনা৷ লেভেল সিগন্যালিংয়ে জরুরি নজরদারি, প্রযুক্তিগত ত্রুটিবিচ্যুতির মেরামতি, করা সম্ভব হলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত, দাবি রিপোর্টে। মূলত: এই রিপোর্টের সূত্রে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের দাবি, ‘ভারতীয় যাত্রীবাহী ট্রেনগুলি বরাবর অবহেলিত, জরুরি সংস্কারের অভাবে সেগুলি আজ ক্রমেই চলমান শবাগারে পরিণত। সংসদে বিরোধী প্রতিনিধিরা একাধিকবার যাত্রী সুরক্ষাহেতু রেলের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রচেষ্টা করেছেন, দিয়েছেন গঠনমূলক পরামর্শ। কিন্তু তাদের কথা কেউ শোনে না, কারণ জনসম্পর্ক বা প্রচারের আলো বরাবর যাত্রী সুরক্ষার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়ে এসেছে।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন রেলের রক্ষণাবেক্ষণে এত বড় ফাঁক রয়ে গেল? কারণ তা শুধুই জনস্বার্থে নিহিত, দেখনদারির জন্য নয় বলে?’ প্রশ্ন তুলেছেন ডেরেক।

Sabyasachi Bhattacharya

Sabbyasachi Bhattacharjee Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 23 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.

Recent Posts

স্বামী-ভাই, মামা-ভাগ্নের জোরে মালদা দুর্নীতি-বন্যায়

রূপায়ণ ভট্টাচার্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি মাফিয়া, বেআইনি নির্মাণ, রাস্তা দখল নিয়ে সতীর্থদের হুমকি দেওয়ার পর…

9 mins ago

১। রথযাত্রার আনন্দে বৃষ্টির 'স্পয়েলার'! শনি থেকে ফের হাওয়া বদলের পূর্বাভাস উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক:…

14 mins ago

Mountain Climbing | হিমালয়ের মণিরাং পর্বতশৃঙ্গ অভিযানে জলপাইগুড়ির ৮

অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: পর্বত আরোহণের কথা মনে এলে দুর্গম পথ আর পাহাড়ের চূড়ায় ভারতের পতাকা…

50 mins ago

Islampur | রিয়েলিটি শোয়ে সাফল্য ইসলামপুরের সুস্মিতার

শুভজিৎ চৌধুরী, ইসলামপুর: আত্মবিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রম করলে জীবনের সব স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। তারই…

1 hour ago

Teesta Project | তিস্তা প্রকল্পে ঢাকাকে প্রস্তাব চিনের

এএইচ ঋদ্ধিমান, ঢাকা: বাংলাদেশের নানা উন্নয়ন প্রকল্পে চিনের আগ্রহ অনেকদিনের। এ ব্যাপারে ভারতকে টেক্কা দিতে…

1 hour ago

মংপুতে গাছ চাপা পড়ে মৃত্যুর শ্রমিকের

মংপু: মংপুতে গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হলো এক ব্যক্তির। মৃত ব্যক্তি মংপু সিঙ্কোনা চা বাগানের…

10 hours ago

This website uses cookies.