অভিরূপ দে, ময়নাগুড়ি: গত কয়েকদিন ধরে ময়নাগুড়ির (Mainaguri) বিভিন্ন পাইকারি বাজার ও গ্রামীণ হাটগুলিতে টমেটোর দাম তলানিতে ঠেকেছে। চাষের খরচ ওঠাতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের। পরিস্থিতি এমন জায়গায় ঠেকেছে যে টমেটো বাজারে ফেলে দিয়েই চলে যাচ্ছেন তাঁরা। শুক্রবারের ঘটনা। তখন সকাল ছয়টা। দুই টাকা কেজি দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছিল টমেটো। তবে বেলা বাড়তেই চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হওয়ায় সেই দাম দেওয়ার মতো ক্রেতাও জুটল না। ক্ষোভে ময়নাগুড়ি রেগুলেটেড মার্কেটেই টমেটো ফেলে চলে যান চাষিরা। পরে দেখা যায় সেই টমেটো খাচ্ছে েগারুরা।
এদিন প্রায় এক কুইন্টাল টমেটো বাজারে নিয়ে এসেছিলেন উল্লারডাবরির চাষি নবীন রায়। তাঁর কথায়, ‘বিঘা প্রতি টমেটো চাষে খরচ হয়েছে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমানে পাইকারি বাজারে যে দাম মিলছে তাতে চাষের খরচ তো দূরের কথা, জমি থেকে টমেটো তোলার খরচও ওঠা মুশকিল। ক্রেতা না থাকায় টমেটো বাজারে ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছি।’
এই পরিস্থিতিতে ময়নাগুড়িতে সরকারি উদ্যোগে বহুমুখী হিমঘরের দাবি তুলেছেন কৃষকদের অনেকেই।
এ ব্যাপারে বিডিও প্রসেনজিৎ কুণ্ডু বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির সঙ্গে কথা বলব। বহুমুখী হিমঘরের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’
চলতি বছর ময়নাগুড়ি ব্লকজুড়ে প্রচুর টমেটো চাষ হয়েছে। প্রথম দিকে টমেটো চাষ করে কৃষকরা দাম পেলেও এখন দাম একেবারে নিম্নমুখী। এতেই চিন্তায় কৃষকরা। এদিন ময়নাগুড়ির সাপ্তাহিক হাটের দিন আশপাশের এলাকা থেকে বহু কৃষক টমেটো নিয়ে রেগুলেটেড মার্কেটে আসেন। সেখান থেকে টমেটো পাইকারদের হাত ধরে িভনরাজ্যে রপ্তানি করা হয়। কিন্তু বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে টমেটোর দাম একেবারে তলানিতে। প্রথম দিকে দুই টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি হতে থাকে। বেলা বাড়তেই প্রচুর পরিমাণ টমেটো বাজারে চলে আসায় সেভাবে দাম মেলেনি কৃষকদের। শ্রমিকের মজুরি থেকে শুরু করে টোটো কিংবা ভ্যানে টমেটো বাজারে নিয়ে আসার খরচ কীভাবে উঠবে তা নিয়ে চিন্তায় কৃষকরা।
বাজারে দাম না মেলায় অনেক কৃষক আবার জমি থেকে টমেটো তুলছেন না বলে জানিয়েছেন বার্ণিশের চাষি শংকর বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করে দেড় বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছি। কিন্তু একেবারে দাম নেই। আর টমেটো তুলছি না। এখন যা পরিস্থিতি, মনে হচ্ছে আমার পুরো টাকাটাই লোকসান হবে।’
পাইকারি টমেটো ব্যবসায়ী মৃন্ময় সরকার বলেন, ‘কৃষকদের থেকে টমেটো কেনার পর প্যাকেটিং, শ্রমিক ও পণ্য পরিবহণের খরচ রয়েছে। বাইরের রাজ্যেও টমেটোর দাম কম। তাই কৃষকদের থেকে বেশি টমেটো কেনার ঝুঁকি নিতে চাইছে না কেউ।’
আগামীদিনে কৃষকরা যাতে বিকল্প চাষে জোর দেন সে ব্যাপারে কৃষি দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কুমুদরঞ্জন রায়।