রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: লোকজন মজার ছলে বলছেন, খেলনাগাড়িতে (Toy Train) নজর লেগেছে। লেবু-লংকা ঝোলাতে হবে প্রত্যেকটা ইঞ্জিনের সামনে। নয়তো কি আর জন্মদিনেও দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়।
একটুর জন্য বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেলেন যাত্রীরা। দার্জিলিং (Darjeeling) থেকে নিউ জলপাইগুড়িগামী টয়ট্রেনের ট্র্যাকের ওপর লরির ধাক্কায় ভেঙে পড়ল গার্ডওয়াল। তড়িঘড়ি জরুরি ব্রেক কষে ট্রেন দাঁড় করালেন লোকোপাইলট। শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটে দার্জিলিংয়ের জোড়বাংলোয়। ট্রেনে থাকা কর্মীরা দ্রুত নেমে আসেন। এরপর স্থানীয়দের সহযোগিতায় মিনিট কুড়ির চেষ্টায় গার্ডওয়াল সরিয়ে ফের নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশে রওনা হয় টয়ট্রেনটি। প্রসঙ্গত, যাত্রীসুরক্ষায় দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (ডিএইচআর)-কে ক্লিনচিট দিয়েছে রেলের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা অডিটের বিশেষ দল।
১৮৮১ সালে ৪ জুলাই এনজেপি থেকে দার্জিলিং যাত্রা শুরু করে খেলনাগাড়ি। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তাই শুক্রবার টয়ট্রেন দিবস পালন করল দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে। সুকনা স্টেশনে নর্থবেঙ্গল পেন্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠান হয়। ডিএইচআর-এর ডিরেক্টর ঋষভ চৌধুরীর কথায়, ‘বিশ্বের ইতিহাসে এই দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে আমরা টয়ট্রেন দিবস পালন করছি। নতুন প্রজন্মের কাছে টয়ট্রেনের ইতিহাস তুলে ধরতে চাই। তাদের আরও বেশি করে আগ্রহ বাড়াতে চাইছি। এদিন স্কুল পড়ুয়াদেরও অনুষ্ঠানে শামিল করা হয়েছিল।’
টয়ট্রেন দিবসে সুকনা স্টেশন চত্বরকে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। নীল-সাদা বেলুনে মুড়ে ফেলা হয় চারদিক। এনজেপি থেকে দার্জিলিংগামী ট্রেনটিকেও বেলুন দিয়ে সাজানো হয়। সকাল ১০টায় হুইসল বাজিয়ে কু-ঝিকঝিক শব্দ তুলে খেলনাগাড়ি যখন সুকনা স্টেশনে ঢুকছিল, তখন পড়ুয়াদের তুলির টানে ট্রেনের ছবি ফুটে উঠছিল সাদা ক্যানভাসে। পাশাপাশি সুকনা স্টেশন সহ ডিএইচআর-এর সঙ্গে জড়িত একাধিক বিষয় পোস্টারের গায়ে ফুটিয়ে তুলছিলেন শিল্পীরা। পর্যটকদের নিয়ে ট্রেনটি বেশ কিছুক্ষণ সুকনা স্টেশনে দাঁড়ায়। সেখানে স্কুল পড়ুয়া এবং শিল্পীদের সঙ্গে পর্যটকদের আলাপ হয়। এরপর ট্রেনটি দার্জিলিংয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়।
এদিনের অনুষ্ঠানে ডিএইচআর-এর ডিরেক্টর ছাড়াও সুকনার স্টেশনমাস্টার তপন মালাকার সহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। উত্তরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিল্পীরা সুকনা স্টেশনে জড়ো হন। কেউ পোস্টার তৈরি করেছেন, তো কেউ এঁকেছেন ছবি। স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে হয়েছে অঙ্কন প্রতিযোগিতা। যার থিম ছিল, টয়ট্রেন। সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সুকনা স্টেশনে অনুষ্ঠান চলে।
জোড়বাংলোর ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। পরে সেই দার্জিলিং থেকে এনজেপিগামী ট্রেনটি সুকনায় দাঁড়ায়। যাত্রীদের টয়ট্রেন দিবস এবং টয়ট্রেনের ইতিহাস সম্পর্কে জানান রেলকর্মীরা। কলকাতার বাসিন্দা সুব্রত গুন দার্জিলিং থেকে পরিবার নিয়ে এনজেপি ফিরছিলেন। মাঝপথে সুকনায় এমন আয়োজন দেখে তিনি আপ্লুত। বললেন, ‘বিশ্ব ঐতিহ্য টয়ট্রেনের জন্মদিন পালন হচ্ছে, এটা তো খুবই ভালো উদ্যোগ। এধরনের প্রচেষ্টা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ টয়ট্রেন সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা দিতে পারবে।’
গত এক বছরে ২০ বার লাইনচ্যুত হয়েছে খেলনাগাড়ি। রয়েছে ট্র্যাকের বেহাল অবস্থা, কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চালকের উপস্থিতিও। তাই যাত্রীসুরক্ষাতেও যে সমান গুরুত্ব দিতে হবে, তা মনে করিয়ে দিলেন সুব্রত।