রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: ‘হে ভগবান! মন্নু, সামনে তো ট্রেন হ্যায়। ম্যাঁয় সামনে কা ব্রেক মারতা হু। তু ভি পিছেকা ব্রেক মার। জোরসে ব্রেক মার। কনটেনার পলটতা হে তো পলটনে দে।’
নির্মলজোতের কাছে বাঁক নেওয়ার পরই একই লাইনে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে (Kanchanjungha Express) দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নাকি সহকারী চালক মন্নু কুমারকে এই নির্দেশই দিয়েছিলেন মালগাড়ির চালক অরুণ কুমার। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারীদের ট্রেন দুর্ঘটনা (Train accident) নিয়ে এমনটাই জানিয়েছেন মন্নু। তবে, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এখনই সন্তুষ্ট হতে পারছেন না তদন্তকারীরা। চিকিৎসক কতদিনে মন্নুকে ‘ফিট’ শংসাপত্র দেন, সেদিকে মুখিয়ে রয়েছেন তাঁরা। তবে জিআরপি সূত্রে খবর, সুস্থ হলেই গ্রেপ্তার হতে পারেন মালগাড়ির সহকারী লোকো পাইলট। কারণ তাঁর নামে ইতিমধ্যে মামলা দায়ের হয়েছে।
মন্নু যে গ্রেপ্তার হতে পারেন সেই জল্পনা আরও জোরালো হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালটিতে পুলিশি প্রহরা বাড়িয়ে দেওয়ায়। মন্নুর ওপর নজর রাখতে চার শিফটে তাঁর কেবিনের বাইরে পুলিশ মোতায়েন করেছে নিউ জলপাইগুড়ি জিআরপি। কোনওভাবেই তিনি যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন কিংবা কেউ তাঁর ক্ষতি করতে না পারে সেইজন্য বাড়তি নজর রাখা হচ্ছে বলে জিআরপি সূত্রে খবর।
ইতিমধ্যে মন্নুর বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে জিআরপি (GRP)। তার মধ্যে ভারতীয় দণ্ডবিধির দুটি ধারা ৩৩৮ এবং ৩০৪ (পার্ট২) জামিন অযোগ্য। বৃহস্পতিবার রাতে মন্নুকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নার্সিংহোমে গিয়েছিলেন তদন্তকারী দলের সদস্যরা। ওই দলে নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে হাসপাতালের চিফ মেডিকেল সুপারের পাশাপাশি ছিলেন দিল্লি থেকে আসা একজন প্রতিনিধি। তিন সদস্যের দলটি রাত ৯টা নাগাদ মন্নুর কেবিনে প্রবেশ করে। প্রায় ২০ মিনিট দলটি মন্নুর সঙ্গে কথা বলে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম সুরেন্দ্র কুমার অবশ্য এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও কিছু নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে না। মন্নু সুস্থ হলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
রাঙ্গাপানির স্টেশন মাস্টারের থেকে থ্রু পাস নিয়ে চটেরহাট স্টেশনের দিকে এগোচ্ছিল মালগাড়ি। গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার (রেলের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী)। দুর্ঘটনাস্থল থেকে রাঙ্গাপানি স্টেশন পর্যন্ত তিনটি লেভেল ক্রসিং পড়ে। তার মধ্যে একটি গেটের কর্মী লক্ষ করেন, একই লাইনে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস থাকা সত্ত্বেও মালগাড়ি নির্ধারিত গতির থেকে বেশি গতিতে ছুটছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিষয়টি ওপরমহলে জানান। ততক্ষণে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। এদিকে মন্নুর রেলকে দেওয়া বয়ান অনুযায়ী, তৃতীয় গেট পার করার পর দুর্ঘটনাস্থল থেকে ১ কিলোমিটার দূরে একটি বাঁক নিতে হয়। ওই সময় তীব্র বৃষ্টি হচ্ছিল।
পাশের আপ লাইনে সামনে থেকে ছুটে আসছিল অন্য একটি যাত্রীবাহী ট্রেন। তাই দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখতেই পাননি মালগাড়ির চালক অনিল কুমার। বাঁক নেওয়ার পরেই একই লাইনে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চালক মন্নুকে উদ্দেশ্য করে জোরে ব্রেক কষতে বলেছিলেন। নির্দেশমাত্রই দুজনে জোরে ব্রেকও কষেন। কিন্তু এতেও শেষরক্ষা হয়নি। গতি কমতে কমতে সোজা গিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার পেছনে ধাক্কা মারে মালগাড়িটি।
রেল সূত্রে খবর, দুর্ঘটনাগ্রস্ত মালগাড়ির ইঞ্জিনের পরীক্ষা করছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। আদৌও ব্রেক কষা হয়েছিল কি না, ব্রেক লেগেছিল কি না সেই সমস্ত বিষয় দেখা হচ্ছে। তবে রেলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জরুরিকালীন ব্রেক কষাতেই দুর্ঘটনার প্রভাব অনেকটা কম ছিল। নয়তো পরিণতি আরও ভয়াবহ হত। ব্রেক কষাতেই ডাউন লাইনে একাধিক স্লিপার ভেঙে গিয়েছে। মালগাড়ির মাঝের সাতটি কনটেনার লাইনচ্যুত হয়েছে।
এদিকে, পরিবারের সদস্যদের বাইরে কারও সঙ্গে সেভাবে কথা বলছেন না মন্নু। নার্সিংহোম সূত্রে খবর, একমাত্র স্ত্রী গেলেই ঠিকমতো কথা বলছেন তিনি। স্ত্রী বেরিয়ে গেলেই আবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন। কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। ঠিকমতো উত্তর দিচ্ছেন না। নার্সিংহোম সূত্রে খবর, ঠিকমতো খাওয়াদাওয়াও করছেন না তিনি। তাহলে কি গ্রেপ্তারির ভয় কাজ করছে তাঁর মনে? প্রশ্নচিহ্নটা বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে পরিবারের কাছে।
বালুরঘাট ও পতিরামঃ ‘এ’ পজিটিভ রক্ত দেওয়ার কথা ছিল ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে, কিন্তু ভুল করে…
গোপাল দে বর্ষা চলে এল। বৃক্ষরোপণের সময়। একদিনও সময় নষ্ট না করে গণ উদ্যোগ শুরু…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ ১৯৯৬ সালে শেষবার ইউরো কাপ ঘরে তুলেছিল জার্মানি। ২৮ বছর পর…
রূপায়ণ ভট্টাচার্য জনসমুদ্রের মধ্যে ডিঙি নৌকোর মতো দুলছে এক হুডখোলা বাস। পাশে আরব সাগর। সাগরে…
গৌতম সরকার শেষ দেখে ছাড়ব। প্রায়ই বলে থাকেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজনীতিতে সাধারণ লব্জ এই শব্দবন্ধটা।…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: গাজায় অব্যাহত হামাস বনাম ইজরায়েল সংঘর্ষ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুমিছিল। এবার…
This website uses cookies.