প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার: ‘টু স্টপ দ্য ট্রেন, পুল দ্য চেইন।’ তা বলে সেই চেন বিনা কারণে টানা যায় না। এতদিন তা করলে জরিমানা ছিল ৫০০ টাকা। তবে বদলাচ্ছে রেলের জরিমানার ধরন। অকারণে চেন টেনে (Train) ট্রেন দাঁড় করালে জরিমানা (Fine) হিসেবে এখন থেকে মিনিটপিছু গুনতে হবে টাকা। ২ মিনিট ট্রেন থামলে প্রায় ১৪ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করবে রেল। ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকার সময় বাড়লে ওই জরিমানার অঙ্কটাও গুণিতকের হিসেবে বাড়বে। তার মানে অবশ্য চেন টানলেই জরিমানা নয়। জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে অবশ্যই ছাড় থাকবে।
এবিষয়ে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সিকিউরিটি কমিশনার সৌরভ দত্ত বলেন, ‘জরুরি কারণ ছাড়া শুধুমাত্র বাড়ির কাছে ট্রেন থামাতেই চেন টানা চলবে না। কোনও যাত্রী যদি বাড়ির সামনে নামার জন্যই ট্রেনের চেন টেনে থাকেন এবং তা প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত যাত্রীদের আর্থিক জরিমানা করা হবে। এই বিষয়ে রেলমন্ত্রকের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে।’
রেলকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অনেক সময় বাড়ির সামনে টেনের স্টপ না থাকলে যাত্রীদের একাংশের বিরুদ্ধে চেন টেনে ট্রেন থামানোর অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন সময়ে এই বিষয়ে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে আইনি পদক্ষেপও করেছে রেল। তা সত্ত্বেও যাত্রীদের একাংশ ব্যক্তিগত কারণে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করেন। এতে চলন্ত ট্রেন তড়িঘড়ি থামতে হয়। অথচ কেবল জরুরিকালীন পরিস্থিতিতেই চেন টানার নির্দেশ রয়েছে। বিভিন্ন সময় যাত্রীদের মধ্যে এনিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার করা হয়েছে। তারপরও সমস্যা মেটেনি।
আলিপুরদুয়ার ডিভিশনে বিভিন্ন স্টেশনে অনেক ট্রেনেরই স্টপ থাকে না। বিশেষ করে অসমগামী বিভিন্ন ট্রেনের বারবিশা, কামাখ্যাগুড়ি বা শামুকতলার মতো স্টেশনে স্টপ নেই। যাত্রীদের তখন নিম্ন অসম বা নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে থামতে হয়। সেখান থেকে আবার সড়কপথে বাড়িতে ফিরতে হয়। এতে ভাড়া ও সময় দুটিই বেশি লাগে। ফলে অনেক যাত্রী বাড়ির কাছাকাছি ট্রেন আসতেই চেন টেনে দেন। তাতে ট্রেন লেট হয়। বাকি যাত্রীদের হয়রানি হয়। তবে কেবল চেন টানা নয়। পাথর ছুড়ে ট্রেনের ক্ষতি করলেও মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে অভিযুক্তদের।
এমন ঘটনায় রেলের আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও যাত্রীদের শারীরিক ক্ষতি হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। তাই যাত্রী নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এবার অভিযুক্তদের থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করবে রেল। তবে অভিযোগ ওঠার পরে তদন্ত করবে আরপিএফের বিশেষ টিম। অভিযোগ প্রমাণিত হলেই রেল আইন অনুযায়ী অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলার সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক জরিমানাও করা হবে। কেউ জখম হলে তাঁর চিকিৎসার ব্যয়ভার বইতে হবে অভিযুক্তকে।
বিভিন্ন সময়ে টেনে পাথর ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু হওয়ার পর এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে। জানলা সহ ইঞ্জিনের সামনের কাচ লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার অভিযোগও উঠেছে। এভাবে কড়া হাতে জরিমানা করা হলে রেলের সম্পত্তি নষ্ট করা বা পাথর ছোড়ার মতো ঘটনাগুলি কমবে বলে মনে করছে রেলমন্ত্রক।