উত্তরবঙ্গ

স্বাস্থ্যসাথী কার্ডেও হয়নি চিকিৎসা, কলকাতায় মৃত্যু ছোট্ট আলমগিরের

জামালদহ: অবশেষে হয়রানির অবসান। গত দুইমাস ধরে গোটা পরিবার প্রথমে স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তারপর অনেক ছোটাছুটির পর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড বানিয়ে শিলিগুড়ির বেসরকারি নার্সিংহোম ঘুরলেন। তবে শেষরক্ষা আর হল কই। এদিন কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে ছোট আলমগিরকে ভর্তি করানোর এক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে। একমাত্র ছেলেকে অকালে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছে আলমগিরের বাবা-মা। তবে ওই শিশুর মৃত্যুতে হাজারো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, জনমানসে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড-এর কার্যকারিতা নিয়ে।

বিএমওএইচ অম্বুজকুমার ঠাকুর জানান, ‘ওই শিশুটিকে আগেই উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। এমন ঘটনা খুবই মর্মান্তিক।’

দুইমাস আগেও সব ঠিকঠাক চলছিল। জামালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর রফিকুল ইসলামের অভাবের সংসার। তবু স্ত্রী নাজমা খাতুন, এক মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে সুখেই ছিলেন রফিকুল। কিন্তু হঠাৎ বাড়িতে খেলতে গিয়ে রফিকুলের তিন বছরের ছেলে আলমগির সিঁড়ি থেকে পড়ে যায়। দ্রুত তাকে চিকিৎসার জন্য জামালদহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় ঠিক তার পরের দিন থেকেই। ছোট্ট আলমগিরের বাম হাত ও পা অসার হয়ে যায়। সেদিনই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জলপাইগুড়িতে। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা যায় আলমগিরের মাথায় জল জমেছে। এমনকি মাথায় কৃমি পাওয়া গিয়েছে বলে ডাক্তার জানান। অবিলম্বে তার মাথায় অস্ত্রোপচারের কথা বলা হয়।

তবে এতবড় অপারেশনের জন্য দরকার প্রচুর টাকার। যা নেই সেই গরিব পরিবারের। তার ওপর পরিবারে কারও নেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডও। ওই কার্ড থাকলে অপারেশনে ছাড় মিলবে সেই আশায় ছোটাছুটি করে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করে ওই পরিবার। সেই কার্ড নিয়ে আলমগিরকে নিয়ে বাবা-মা পৌঁছায় শিলিগুড়িতে। তবে হতাশা ছাড়া যেন কিছুই পাওয়ার ছিল না তাদের। সেখানের বিভিন্ন বেসরকারি নার্সিংহোম ঘুরলেও কোথাও স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা করাতে রাজি হয়নি। এরপর বাড়ি ফিরে আসে তারা।

এদিকে, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকে আলমগির। সেই খবর প্রকাশিত হয় উওরবঙ্গ সংবাদে। খবর প্রকাশিত হতেই ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ান জামালদহের বিজেপি নেতা প্রশান্তকুমার সাহা। তাঁর উদ্যোগে ভোটের কয়েকদিন আগে বিজেপির বিদায়ি সাংসদ জয়ন্ত রায় বিষয়টি জানতে পারেন। তাঁর উদ্যোগেই আলমগিরকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা এনআরএস হাসপাতালে। সেখানে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে ডাক্তার ২৭ এপ্রিল আলমগিরের অপারেশনের তারিখ দেয়। গত ২৩ এপ্রিল আলমগিরকে নিয়ে তার বাবা-মা রওনা হন কলকাতার উদ্দেশ্যে। সঙ্গে যান প্রশান্ত ও তাঁর স্ত্রী। তবে সেখানে আলমগিরের পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে বৃহস্পতিবারই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

বিকেল পাঁচটায় অপারেশন করার কথা থাকলেও তার আগেই মারা যায় আলমগির। প্রশান্তের কথায়, ‘গত দুইদিন ধরে বমি করছিল শিশুটি। জ্বরেও ভুগছিল। যদি আগেই তার চিকিৎসা করা যেত, তবে অকালে ফুলের মতো একটি শিশুকে চলে যেতে হত না।’ এদিন সন্ধ্যায় অ্যাম্বুল্যান্সে আলমগিরের নিথর দেহ নিয়ে রওনা দেন তাঁরা। শুক্রবার জামালদহে পৌঁছাবেন।

Sucharita Chanda

Sucharita Chanda is working as Sub Editor Since 2020. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad. She is involved in Copy Editing, Uploading in website and various social media platforms.

Recent Posts

Elephant | ফের জঙ্গলে রুটিন টহলদারিতে শিলাবতী

ময়নাগুড়ি: দেখতে দেখতে তিন মাসের বেশি সময় হয়ে গেল। রামশাই (Ramsai) মেদলা ক্যাম্পের জঙ্গলে সেভাবে…

8 mins ago

Health Care Centre | উদ্বোধনের পাঁচ মাস পরেও অচল স্বাস্থ্যকেন্দ্র

কার্তিক দাস, খড়িবাড়ি: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছিলেন অধিকারীর বারাসতভিটার সুস্বাস্থ্যকেন্দ্র…

24 mins ago

Gojoldoba | তিস্তার পলিতে বাদাম উৎপাদনে ভাটা, দুর্দশায় গজলডোবা

সানি সরকার, গজলডোবা: প্রাক বর্ষায় চারদিক সবুজময়। কিন্তু মাটির নীচের ‘চেনা সোনা’ উধাও। গত কয়েকমাসের…

40 mins ago

Elephant Attack | হাতির হানায় ভাঙল দোকান ঘর, ক্ষতিগ্রস্ত ফসল

ফালাকাটা: হাতির হামলায়(Elephant Attack) ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হল ফালাকাটার(Falakata) বংশীধরপুর, রাইচেঙ্গা ও কালীপুর গ্রামে। শনিবার রাতে…

1 hour ago

Balurghat | শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে নীলগাই! তল্লাশি বন দপ্তরের

বালুরঘাট: বর্তমানে নীলগাই বিপন্ন প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে। অনেকে এই নীলগাই দেখে বাছুর ও হরিণের মিশ্রণ…

1 hour ago

নতুন মডেল

  দেবাশিস দাশগুপ্ত গত ৭ মে নিজের মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে বিভিন্ন বুথে ঘুরে ঘুরে ভূত তাড়িয়েছেন।…

2 hours ago

This website uses cookies.