অনীক চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: শিবরাত্রি (Shivratri) উপলক্ষ্যে এখন জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) শহরে বেজায় ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। কেউ করছেন মাটির শেষ প্রলেপ লাগানোর কাজ, তো কেউ ব্যস্ত প্রতিমার কাঠামোতে বাঁধন দিতে। কে কত ভালো প্রতিমা তৈরি করে পুজো উদ্যোক্তা এবং ভক্তদের হৃদয় ছুঁতে পারেন তারই যেন প্রতিযোগিতা চলছে শহরের পালপাড়ায়।
প্রশ্ন হল, দুর্গা প্রতিমা, কালী প্রতিমা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যস্ততার কথা জানা থাকলেও শিবের মূর্তি তৈরি নিয়ে ব্যস্ততা কেন? মৃৎশিল্পীদের কথায়, আগে শহরের বিভিন্ন শিব মন্দিরে শিবলিঙ্গকেই পুজো দিতেন সকলে। কিন্তু দিন-দিন মূর্তি গড়ে পুজো দেওয়ার চল বেড়েছে। তাই প্রতিষ্ঠিত মন্দির ছাড়াও কোনও ক্লাব কিংবা পাড়ার কিছুজন মিলে মূর্তি তৈরি করিয়ে দু’দিনের প্যান্ডেল করে পুজোর ব্যবস্থা করছেন। এছাড়া কোনও গাছের তলায় শিবলিঙ্গ থাকলে পুজোর দিনে শিবমূর্তি নিয়ে পাশেই মণ্ডপ বানিয়ে পুজো করার চল বাড়ছে প্রতি বছর।
প্রবীণ মৃৎশিল্পী রতন পাল বলেন, ‘এ বছর ১১টি মূর্তি তৈরির কাজ নিয়েছি। কোনওটা শুধু শিবের, কোনওটা বা নন্দীর ওপরে বসা শিবপার্বতীর। কিছু প্রতিমায় পার্বতীর কোলে ছোট্ট গণেশও।’ তিনি আরও বলেন, ‘বংশপরম্পরায় এই কাজ করে আসছি। আগে শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে কোনওদিন মূর্তি তৈরির বায়না পায়নি। গত তিন-চার বছর ধরে বরাত পাচ্ছি। কেন আলাদা করে মূর্তি তৈরি করে পুজো হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি না।’
অন্যদিকে, বড়সড়ো মূর্তি তৈরির অর্ডার আসছে বলে জানালেন নতুন প্রজন্মের মৃৎশিল্পী মাধব শীল। তঁার কথায়, ‘ঠাকুর বানানো আমাদের কাজ, অর্ডার পেলে অবশ্যই বানাব। কিন্তু দািব আসছে বড়সড়ো মূর্তি লাগবে। অমুক পাড়ার থেকে যেন বড় হয়। এই বড় প্রতিমা বানানোর ফ্যাসিনেশনটা বুঝি না। আমার কাছেও বড় প্রতিমার অর্ডার এসেছে। নন্দীর ওপরে বসা শিবপার্বতীর মূর্তিটির উচ্চতা প্রায় সাত ফুট।’
মূর্তি গড়ে শিবপুজো করছেন এমন এক উদ্যোক্তা রাজীব চন্দ বলেন, ‘আমাদের চৌধুরীপাড়ায় বড় কোনও শিব মন্দির নেই। আমাদের এলাকার মানুষকে পুজো দিতে বেশ কিছুটা দূরে যেতে হয়। তাই আমরা সকলে মিলে ঠিক করি যে, এখানে মূর্তি দিয়ে পুজো করব। সেইমতো আমরা শিবপার্বতীর মূর্তি তৈরির অর্ডার দিয়েছি।’