শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫

ট্রাম্পের নোবেল দাবি

শেষ আপডেট:

২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের ঘোষণা আর মাত্র চারদিন পর ১০ অক্টোবর। সময় যত এগিয়ে আসছে, উত্তেজনা বাড়ছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের। গত ছয় মাসেরও বেশি সময় তিনি নিজেকে নোবেল শান্তি সম্মানের একমাত্র দাবিদার বলে গলা ফাটিয়ে চলেছেন। পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সুপারিশও করেছে। আজ পর্যন্ত আর কোনও রাষ্ট্রপ্রধান নিজেকে এই সম্মানের দাবিদার বলে ঘোষণা করেছেন কি না, জানা নেই।

ট্রাম্প সেটা করেছেন গত এপ্রিলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণার পর থেকে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, তাঁরই মধ্যস্থতায় ভারত-পাক পরমাণু যুদ্ধ এড়ানো গিয়েছে।‌ কীভাবে? তিনি নাকি ভারত ও পাকিস্তান দু’দেশকেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, যুদ্ধ না থামালে আমেরিকা তাদের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করে দেবে।

ভারত অবশ্য ট্রাম্পের এই দাবিকে সমর্থন করে না। মোদি সরকারের বক্তব্য, পাকিস্তান প্রথমে সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল।‌ ভারত সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয় মাত্র। দিল্লি এই দাবি করলে কী হবে? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতের দাবিকে থোড়াই পরোয়া করে আজ পর্যন্ত অন্তত বার চল্লিশেক ঘোষণা করেছেন যে, তাঁরই মধ্যস্থতায় ভারত এবং পাকিস্তানের যুদ্ধ থেমেছে। অতএব নোবেল শান্তি পুরস্কার তাঁরই প্রাপ্য।

ঘটনাচক্রে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের কিছুকাল পর ঘটে ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ।‌ সেই যুদ্ধও তাঁর চেষ্টায় থেমেছিল বলে ট্রাম্প দাবি করে থাকেন। সম্প্রতি আমেরিকান কর্নারস্টোন ইনস্টিটিউটের ফাউন্ডার্স ডিনারের বক্তৃতায় মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান আরও একবার বলেছেন, তিনি ভারত-পাকিস্তান সহ অন্তত সাতটি যুদ্ধ থামিয়েছেন। সেই তালিকায় রয়েছে ভারত-পাকিস্তান, থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান, কসোভো-সার্বিয়া, ইরান-ইজরায়েল, মিশর-ইথিওপিয়া এবং রোয়ান্ডা-কঙ্গোর যুদ্ধ।

ওই অনুষ্ঠানে ট্রাম্প স্পষ্ট ঘোষণা করেন, মার্কিন বাণিজ্যকে অস্ত্র করে তিনি এইসব যুদ্ধ থামাতে পেরেছেন। প্রতিটি যুদ্ধ থামানোর জন্য আলাদা আলাদাভাবে তাঁর নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত বলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি। এর আগে একাধিকবার ট্রাম্প বলেছিলেন, এতদিনে তাঁর অন্তত তিন-চারটি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল। কার্যত সারাক্ষণ নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে কথা বলা এখন ট্রাম্পের মুদ্রাদোষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দিন কয়েক আগে আমেরিকার ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভার অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়ার সময় এসকালেটার এবং টেলিপ্রম্পটারে কিছু সমস্যা হওয়ায় হঠাৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভাঙা রেকর্ড বাজানোর মতো বলে উঠলেন, তিনি সাতটি যুদ্ধ থামিয়েছেন এবং তাঁর নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভার ওই অধিবেশনেই পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ট্রাম্পকে ‘শান্তির দূত’ বলে অভিহিত করেন। আবারও জানান, তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করছেন।

কিন্তু সত্যিই কি ট্রাম্প এই সম্মান পাওয়ার যোগ্য? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প যে সাতটি যুদ্ধের উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে কয়েকটিকে পুরোদস্তুর যুদ্ধই বলা যায় না। দ্বিতীয়ত, সাতটির মধ্যে কোনও কোনও সংঘর্ষ থেমে আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। তৃতীয়ত, কোনও কোনও ক্ষেত্রে ট্রাম্প নিজের ভূমিকাকে অতিরঞ্জিত করে বলেছেন।

তার চেয়েও বড় কথা, আলফ্রেড নোবেল চেয়েছিলেন, পৃথিবীতে এমন পরিবেশ তৈরি হোক, যেখানে যুদ্ধই বাধবে না। যুদ্ধ থামানোর চেয়েও বড় কৃতিত্ব যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে না দেওয়া। সেই প্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভূমিকা পুরোপুরি উলটো।‌ প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে তিনি বেরিয়ে এলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) থেকে আমেরিকাকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।‌ সর্বোপরি গাজায় নিয়মিত গণহত্যার ক্ষেত্রে ইজরায়েলের পাশে সবসময় রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সুতরাং ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে ট্রাম্পের নাম কখনোই ঘোষণা হওয়া উচিত নয়।

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.

Share post:

Popular

More like this
Related

প্রশ্নে বিশ্বাসযোগ্যতা

নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন রাহুল...

শক্ত কাজ 

ক’দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের বাড়িতে বাড়িতে নাওয়া-খাওয়া মাথায় উঠেছে। ২০০২...

ছকবাজি

‘মারি অরি পারি যে কৌশলে।’ মেঘনাদবধ কাব্যে কথিত এই...

ধমনীতে দূষিত রক্ত

রক্তের টান অত সহজ কথা নয়। শিকড়ের টানের মতো।...