হেমতাবাদ : খানিকটা যেন বজরঙ্গি ভাইজান সিনেমার মুন্নির গল্পের সঙ্গে মিল আছে একেবারে হাতেগরম সত্যি এই ঘটনার। তবে এক্ষেত্রে মূল চরিত্র একজন আট বছরের বালক। রিল আর রিয়েল লাইফের এমন আশ্চর্য মিল যে কোনও সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে।
কাঁটাতার টপকে ভারতে প্রবেশ করার সময় আট বছরের নাবালককে গ্রেপ্তার করল বিএসএফ। বৃহস্পতিবার সকালে ওই নাবালককে হেমতাবাদ থানার পুলিশের হাতে তুলে দেন ৬৩ নম্বর ব্যাটালিয়নের আধিকারিক। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁকে কর্ণজোড়ার জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে তোলা হলে বিচারক হোমে রাখার নির্দেশ দেন।
বিএসএফ জানিয়েছে, ওই নাবালকের বাড়ি বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার পিরগঞ্জ থানার বেলদহি গ্রামে। ৮ বছরের ওই নাবালকের চেহারা শ্যামবর্ণ, চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ, পরনে কালো প্যান্ট ও উলের জ্যাকেট। এদিন সকালে বিএসএফের আধিকারিকেরা ওই নাবালককে আটক করে হেমতাবাদ থানায় নিয়ে আসলে পুলিশ প্রথমে তাকে নিতে অস্বীকার করে। পুলিশ আধিকারিকদের প্রস্তাব ছিল, ওই নাবালককে ফ্ল্যাগ মার্চের মাধ্যমে পুশব্যাক করে দেওয়া হোক। কিন্তু বিএসএফের সাফ জবাব, ওই নাবালকের নিরাপত্তার স্বার্থে হেমতাবাদ থানার মাধ্যমে হোমে রাখার ব্যবস্থা করা হোক। সবটাই করা হোক আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এরপর পুলিশ বাধ্য হয়ে ফরেন অ্যাক্টে মামলা রুজু করে জুভিনাইল জাস্টিস বোর্ডে পাঠায়।
ওই নাবালকের বক্তব্য, ‘বাংলাদেশে শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নয়, মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপরেও হামলা চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। আমার বাবা হাসিনার দল করত, সেটাই আমার বাবার অপরাধ। বাবাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল দুষ্কৃতীরা। এরপর যে যার মতো বাড়ি থেকে পালিয়ে বেরিয়ে যাই। আমার বাবা দশদিন ধরে ফুপুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ উলটে মামলা দিয়ে দিচ্ছে। সেই কারণেই গতকাল সকালে ঠিক করি, আমি ভারতে গিয়ে থাকব। আমার মাও বলেছে, ভাইবোনদের নিয়ে ভারতের বিএসএফের হাতে ধরা দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে।’
বিএসএফের আধিকারিক সুনীল কুমার বলেন, ‘গতকাল হেমতাবাদের বামর বিওপি থেকে ওই বাংলাদেশি নাবালককে উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানতে পারি, বাংলাদেশের ভয়ংকর পরিস্থিতি নির্দিষ্ট কোনও জাতি নয় হিন্দু, মুসলিম প্রত্যেকেই আক্রান্ত ও আতঙ্কগ্রস্ত। সেই কারণেই আমরা পুশব্যাক না করিয়ে হেমতাবাদ থানার মাধ্যমে তাকে হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।’
হেমতাবাদ থানার আইসি সুজিত লামা বলেন, ‘বিএসএফের তরফ থেকে একজন বাংলাদেশি নাবালককে আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আমরা নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।’