পতিরাম: পতিরামসহ দক্ষিণ দিনাজপুরের বাজারে হু হু করে বেড়ে চলেছে উন্নতমানের চালের দাম। বিখ্যাত তুলাইপাঞ্জি চাল ও চিনি আতপ চালের বাজারদর প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে গত বছরের তুলনায়। এর পাশাপাশি বাসমতি ও কাটারি ভোগের দামও যথেষ্টই ঊর্ধ্বমুখী। ভালো মানের চাল কিনতে সাধারণ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের নাভিশ্বাস উঠেছে।
গত বছর ভালো মানের যে তুলাইপাঞ্জি চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১৩০ টাকা, তা এখন বাজারে ২০০ টাকায় বিকোচ্ছে। চিনি আতপ চালও ব্যতিক্রম নয়। গতবছর ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হওয়া চাল এখন ১৬০-১৭০ টাকায় মিলছে। ক্রেতা সায়ন্তন মজুমদার বলেন, “আগে তুলাইপাঞ্জি ১২০ টাকায় পেতাম, এখন ১৭০ চাইছে দোকানদার। তাই বাধ্য হয়ে ৮০ টাকায় বাসমতি নিতে হয়েছে। কাটারিও এক বছরে ৬৫ থেকে ৯৫ টাকায় পৌঁছেছে।” একই সুর ক্রেতা লতা সাহা, তৃষা দাস ও প্রতীক দেবদের গলায়ও শোনা গেছে।
উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ অঞ্চল মূলত তুলাইপাঞ্জি ধানের উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। তবে হেমতাবাদ, ইটাহার, কালিয়াগঞ্জের পাশাপাশি দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশুমন্ডিতেও এই চালের কিছুটা উৎপাদন হয়। তবে বর্তমানে জেলার বিভিন্ন প্রান্তেও এর চাষ হচ্ছে। সুগন্ধি ও স্বাদের জন্য তুলাইপাঞ্জি ও চিনি আতপ চালের চাহিদা রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ বছরের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। উৎপাদন কমে যাওয়া, সরকারি মজুদ হ্রাস, দালাল ও ফড়েদের দৌরাত্ম্য, এবং পরিবহন খরচ বৃদ্ধি প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। পাশাপাশি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিশ্ববাজারে চালের চাহিদা বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
শস্য বিশেষজ্ঞ নকুল মণ্ডল বলেন, ‘দামের ওঠানামা মূলত নির্ভর করে জোগান ও চাহিদার ভারসাম্যের উপর। এবার উৎপাদন কম হওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আমন ধান উঠলে আশা করা যায় দাম কিছুটা স্থিতিশীল হবে।’
এদিকে সাধারণ ক্রেতারা সরকারের হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন। তাদের বক্তব্য, ‘কালোবাজারি হচ্ছে কিনা প্রশাসন খোঁজ নিক। যদি দ্রুত প্রশাসনিক উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তবে উৎসবের মরসুমে নিত্যপ্রয়োজনীয় চালের দাম আরও বাড়তে পারে, যা সাধারণ পরিবারের বাজেটে বড় ধাক্কা দেবে।

