শিলিগুড়ি: দুপুর তখন তিনটে। জলপাইমোড়ে দোকানে বসে থাকার সময় বারবারই তার নজরে পড়ল বাইরে দুই কিশোরী ঘোরাঘোরি করছে। বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘোরি করার পর তাঁরা দোকানে এসে বিস্কুট-জল চাইতেই আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেননি ওই দোকানদার রুমা দত্ত। প্রশ্ন করে বসলেন, ‘তোমরা কোথা থেকে এসেছ?’ প্রশ্নের উত্তরে ওই কিশোরীরা জানায়, ‘আমরা চোপড়া থেকে এসেছি।’
তবে এরপরই ওই দুই কিশোরী কতটা অসহায়তার মধ্যে পড়েছেন সেটা বুঝতে পারেন ওই মহিলা। মহিলার কাছে তারা তাদের রুপোর গয়না দিয়ে আবেদন করে, ‘এটা নিয়ে আমাদের একটু টাকা দাও। আমরা কুলিপাড়ায় পিসির বাড়ি যাব।’ না, এরপর আর ওই দুই অসহায় কিশোরীকে ছাড়েনি রুমাদেবি। তিনি তাদের বসিয়ে পুলিশে খবর দেন। রুমার বক্তব্য, ‘কী করে ছাড়ি বলুন তো? টোটোয় তুলে দিলে ভগবান না করুক, যদি কোনও বিপদ হয়ে যায়, তাহলে?’ শেষমেষ শিলিগুড়ি থানার পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এরপর পুলিশের তরফে চোপড়ায় তাদের পরিবারের সদস্যদের ডাক দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা আসার পর ওই দুই কিশোরীকে সিডাব্লুসি-র হাতে তুলে দেয়।
কিন্তু কেন চোপড়া থেকে এল তারা? পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পারিবারিক ঝগড়ার কারণেই তারা বাইরে বেরিয়ে যায়। কুলিপাড়ায় পিসির বাড়িতে আসবে বলে ওই দুই বোন সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু শহরে আসার পরেই ঘটে বিপত্তি। রাস্তা বুঝতে না পেরে জংশনে নামার পর তারা কুলিপাড়ার খোঁজ করতে করতেই চলে আসে জলপাইমোড়ে। এরপর তারা কোথায় যাবে? সেই ব্যাপারে অন্ধকারে ডুবে যায় ওই দুই কিশোরী। শনিবার রুমা ওই কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে পুলিশের অপেক্ষায় দোকানের সামনেই বেঞ্চে বসিয়ে দেয়। সেখানে ওই দুই কিশোরীকে বসে থাকতে দেখে আশপাশের দোকানদার, পথচলতি মানুষজনও সেখানে ভিড় করে। দুই কিশোরী শহরে এসে রাস্তা হারিয়ে ফেলার কথা শুনে এদিন ছুটে এসেছিলেন কৌন্তভ দত্ত। তিনি বলেন, ‘ওই কিশোরী এভাবে হারিয়ে গিয়েছে, সেটা বুঝে কী করা উচিত, সেব্যাপারে আমরা একটা এনজিওর সঙ্গেও যোগাযোগ করি। পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলেই কিশোরীদের নিরাপত্তা বহাল থাকবে বলে আমরা সকলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই। এরপর শিলিগুড়ি থানার পুলিশ এসে তাদের নিয়ে যায়, মহিলা পুলিশও এসেছিল।’