আলিপুরদুয়ার: বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানদের আবেগ যে কতখানি হতে পারে, তার নিদর্শন দেখা গেল আলিপুরদুয়ারের নাবালক উদ্ধারের দুটি ঘটনায়। আলিপুরদুয়ার জংশন স্টেশন থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার চেষ্টা করেছিল তিন নাবালক। অবশ্য তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি। শেষপর্যন্ত তাদের উদ্ধার করে চাইল্ড হেল্প ডেস্ক-এর মাধ্যমে সিডব্লিউসির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘটনা আলাদা আলাদা হলেও একটি বিষয়ে কিন্তু মিল রয়েছে। তা হল, দুই ক্ষেত্রেই নাবালকরা ঘর ছেড়ে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে চেয়েছিল বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা বুকে নিয়ে। একজন তো সঙ্গে আবার এক বন্ধুকেও নিয়েছিল সফরসঙ্গী হিসেবে।
জংশন লাগোয়া এলাকার একটি আবাসিক স্কুলের সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া এক কিশোরকে সোমবার উদ্ধার করা হয়েছে আলিপুরদুয়ার জংশন স্টেশন লাগোয়া এলাকা থেকেই। তার বাবার খোঁজ পাওয়া যায়নি। মা থাকেন শিলিগুড়িতে। সেই কিশোর গুছিয়ে কথা বলতে না পারলেও সিডব্লিউসির আধিকারিকদের বক্তব্য, মা হয়তো দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন। ছেলেটি স্কুলের হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করত। মায়ের জন্য মন কেমন করায় কাউকে কিছু না জানিয়ে হস্টেল থেকে চুপিসারে বেরিয়ে সটান স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এসে কী করবে বুঝতে পারছিল না। ভয়ে কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। খবর পেয়ে আলিপুরদুয়ার জংশন ফাঁড়ির পুলিশ ওই পড়ুয়াকে উদ্ধার করে সিডব্লিউসি’র হাতে তুলে দেয়। খবর পেয়ে বিকেল নাগাদ শিলিগুড়ি থেকে আসেন ওই পড়ুয়ার মা। শেষপর্যন্ত মাকে কাছে পেয়ে শান্ত হয় ওই পড়ুয়া।
দ্বিতীয় ঘটনায় দুই নাবালককে উদ্ধার করা হয়েছে সেই আলিপুরদুয়ার জংশন স্টেশন থেকেই। আলিপুরদুয়ার ভোলারডাবরি এলাকার বাসিন্দা এক নাবালক তার এক বন্ধুকে নিয়ে ট্রেনে চেপেছিল বাবা-মায়ের কাছে যাবে বলে। তার বাবা-মা কাজ করেন শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়িতে। এখানে সেই কিশোর থাকত দাদু-দিদার কাছে। মাস পাঁচেক আগে বাবা-মা এসেছিলেন ভোলারডাবরিতে। তারপর আর দেখা হয়নি। মন কেমন করায় বন্ধুকে নিয়ে শিলিগুড়ি পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করে। জংশন স্টেশনে এসে শিলিগুড়ি রুটের ট্রেনে চড়েও বসে। তবে আরপিএফ এবং চাইল্ড হেল্প ডেস্কের নজরে পড়ে। জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে তারা। তারপর তাদের উদ্ধার করে চাইল্ড হেল্প ডেস্কের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে সিডব্লিউসি তাদের হোমে রাখার ব্যবস্থা করেছে।
চাইল্ড হেল্প ডেস্ক কোঅর্ডিনেটর রিয়া ছেত্রী বলেন, ‘দুই নাবালককে উদ্ধার করে কাউন্সেলিং করা হয়। তাদের বাড়ির লোককে জানানো হয়েছে।’
প্ল্যাটফর্মে দুই নাবালককে ট্রেনের জন্য ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হয়। খোঁজখবর শুরু হতেই তারা ট্রেনেও চেপে বসে। সঙ্গে অভিভাবক কারা রয়েছেন, ট্রেনের টিকিট আছে কি না, এসব জানতে চাইলে তারা সদুত্তর দিতে পারেনি।
সিডব্লিউসি’র চেয়ারম্যান অসীম বসু বলেন, ‘দুজনকে হোমে রাখা হয়েছে। কেন ঘর ছাড়ল, কোথায় যাচ্ছিল, তা জানতে কাউন্সেলিং করা হয়েছে।’ ছেলেটি জানিয়েছে, বাবা-মায়ের কর্মস্থলে সে আগেও গিয়েছে। সেই ভরসায় ট্রেনে চেপে বসেছিল। তার বাবা-মাকে জানানো হলেও তাঁরা এদিন আসতে পারেননি। তাই প্রাথমিক কাউন্সেলিংয়ের পর তাদের হোমে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, কলকাতা থেকে আলিপুরদুয়ার হয়ে অসম যাওয়ার পথে নাবালক যুগলকে উদ্ধার করেছে আরপিএফ। জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা প্রেমের কথা স্বীকার করেছে। তাদেরও উদ্ধার করে হোমে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।