শিবশংকর সূত্রধর, কোচবিহার: ডায়াবিটিস (Diabetes) হলে চিকিত্সকরা ভাত থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু বাঙালির কি আর ভাত ছাড়া চলে? ডায়াবিটিস যতই ‘সাইলেন্ট কিলার’ হোক না কেন, ভাত থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা কষ্টকর বটে। কিন্তু যদি এমনটা হয় যে ডায়াবিটিস রোগীদের পাতেও নিয়মিত ভাত পড়ছে? কেমন হত যদি বিস্কুটের মতো ভাতও হয় সুগার ফ্রি? অসম্ভব ঠেকছে কি? পুণ্ডিবাড়িতে (Pundibari) উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (UBKV) এমনই ‘সুগার ফ্রি ধান’ নিয়ে গবেষণা করছে। কৃষিবিজ্ঞানী এবং পড়ুয়ারা ইতিমধ্যেই নিজেদের ক্যাম্পাসে সফলভাবে এক বিঘা জমিতে সুগার ফ্রি ধান চাষ করে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, শুধু গবেষণা নয়, পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকজন চাষিকে বীজ দেওয়া হয়েছে। ঠিক কীভাবে হচ্ছে এই সুগার ফ্রি ধান চাষ? বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ অশোক সাহা বললেন, ‘প্রথমে আমরা কয়েকজন চাষিকে এই ধানের বীজ দিচ্ছি। তাঁরা চাষ করছেন। ধীরে ধীরে এটা বাণিজ্যিকভাবে চাষের দিকে এগোলে চাষিরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনই ডায়াবিটিস রোগীরা চিন্তামুক্ত হয়ে ভাত খাওয়ার সুযোগ পাবেন।’ সুগার ফ্রি ধানের ফলন কেমন? তিনি জানালেন, অন্য ধানের তুলনায় কম। তবে তাঁরা ফলন বাড়ানোর জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কবে থেকে চলছে গবেষণা? বিজ্ঞানীরা জানান, তেলেঙ্গানার একটি সংস্থার সহযোগিতায় ২০২১ সাল থেকে গবেষণা চলছে। ‘তেলেঙ্গানা সোনা’ প্রজাতির এই ধান বর্ষাকালে সবচেয়ে ভালো হয়। গবেষকরা জানাচ্ছেন, কোনও খাবারে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫৫-র কম থাকলে সেটি সুগার ফ্রি বলা যায়। খোলাবাজারে যে চাল বিক্রি হয় তার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৭০-এর ওপর। তবে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ধানে সেই ইনডেক্স ৫২.৫। ফলে এই ধান থেকে উৎপন্ন চালের ভাত খেলে ডায়াবিটিস রোগীদের কোনও সমস্যা হবে না বলেই দাবি গবেষকদের।
খাওয়ার পর সেখানে থাকা কার্বোহাইড্রেট গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়ে রক্তে মিশে যাওয়া ক্ষতিকারক। যে খাবারে গ্লুকোজ তৈরির প্রবণতা যত বেশি, সেই খাবার থেকে ডায়াবিটিস রোগীদের তত বেশি দূরে থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। বর্তমানে খোলাবাজারে যে চাল বিক্রি হয়, সেগুলি বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত, পালিশ করা। তাই চালের ওপরের দিকে থাকা ফাইবার ও ভিটামিনের পরিমাণ কমে গেলেও মাঝখানের অংশে থাকা কার্বোহাইড্রেট একই পরিমাণে থাকে। সেই কার্বোহাইড্রেট থেকে গ্লুকোজ তৈরির প্রবণতা বেড়ে যায়।
কোচবিহারের প্রবীণ বাসিন্দা বিমল ভট্টাচার্য বহু বছর ধরে ডায়াবিটিসের রোগী। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক ভাত খেতে বারণ করেছেন। খেলেও একেবারেই কম।’ যদি সুগার ফ্রি চাল পাওয়া যায়? তাঁর কথায়, ‘তাহলে তো বেশ ভালো হবে। আবার ভাত খেতে পারব।’
সাধারণত এক বিঘা জমিতে সাড়ে ছয় থেকে আট কুইন্টাল ধান পাওয়া যায়। কিন্তু সুগার ফ্রি ধানের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় চার-পাঁচ কুইন্টাল। সুগার ফ্রি ধান চাষে প্রয়োজন জৈব সার। ফলে খোলাবাজারে এই চাল বেশি দামে বিক্রি করতে হবে চাষিদের। দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেজন্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আপাতত ফলন বাড়ানোর বিষয়টিতেই মনোনিবেশ করেছেন।