সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি: বাম আমলের একেবারে শেষদিকে গ্রামের উন্নয়নে নজর দেওয়ার কথা বলেছিলেন সিপিএম নেতারা। এবার যেন সেই পথই ধরতে চাইছে তৃণমূল। সৌগত রায়ের পর এবার উদয়ন গুহ (Udayan Guha)- তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের বক্তব্যেই তা যেন স্পষ্ট।
দমদমের চারবারের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় যেমন বুধবার বলেছিলেন, ‘গরিব মহিলা বিশেষ করে গ্রামের লোকই আমাদের ভোটে জিতিয়েছেন। শহরের ফ্ল্যাটবাড়ির বাসিন্দা এবং অবস্থাপন্নরা তৃণমূলকে ভোট দেননি।’ তাঁর এই ক্ষোভের সুর থেকেই শহর এবং গ্রামের বিভাজনের ইঙ্গিতটা স্পষ্ট। শহরের মানুষ যে তৃণমূলকে ভোট দেননি, তা দিনকয়েক আগে কবুল করেছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহও।
এবার একধাপ এগিয়ে বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে (Siliguri) সাংবাদিক বৈঠক করে মন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, তাঁর দপ্তরের এখন একমাত্র লক্ষ্য গ্রামের উন্নয়ন। তাহলে কি কোথাও গিয়ে শহরের মানুষকে ‘শাস্তি’ দিতে চাইছে রাজ্য সরকার? এই প্রশ্নে অবশ্য কুলুপ এঁটেছেন দুঁদে মন্ত্রী। এদিন উত্তরবঙ্গের মিনি সচিবালয় উত্তরকন্যায় উদয়ন বলেন, ‘বড় প্রকল্প নেওয়ার বদলে উত্তরের আট জেলার গ্রামাঞ্চলে পাকা রাস্তা, কালভার্ট, নালা তৈরির ঢালাও কাজ করবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর।’
রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর তৈরি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমবার এই দপ্তরের মন্ত্রী হয়ে বসে ছিলেন গৌতম দেব। তাঁর আমলে শহর-গ্রামে একাধিক বড় উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। তাহলে এখন হঠাৎ গ্রামে নজর কেন? গৌতমের প্রতিক্রিয়া, ‘এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। প্রতিটি দপ্তরের কাজের নিজস্ব ধরন থাকে। সেইভাবেই হয়তো কাজ হচ্ছে।’
লোকসভায় উত্তরে ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটের আগে লাগাতার উত্তরে পড়ে থাকলেও মুখ ফিরিয়েছেন সাধারণ মানুষ। কোচবিহার বাদে আর কোথাও জয়ের গন্ধ পায়নি ঘাসফুল শিবির। ২০২৬-এ আবার রয়েছে বিধানসভা ভোট। একদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী ২২০ আসনের টার্গেট বেঁধে দিয়েছেন নেতা-মন্ত্রীদের। মনে করা হচ্ছে, সেই ভোটের অঙ্ক কষেই এবার গ্রামাঞ্চলে বাড়তি নজর দিতে চাইছে রাজ্য সরকার।
উদয়ন এদিন জানিয়েছেন, চলতি অর্থবর্ষে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর প্রায় সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা খরচ করে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করবে। যার সিংহভাগই হবে গ্রামকেন্দ্রিক। মন্ত্রী বলেছেন, ‘নির্বাচনের কারণে তিন মাস কাজ বন্ধ ছিল। সেই কারণে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় টেন্ডার করে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার কাজ শুরু করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি বিধানসভা কেন্দ্র ধরে কাজ হবে। বড় প্রকল্পের কাজ করার জন্য অন্য অনেক দপ্তর রয়েছে। আমরা গ্রামাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছি।’ বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, বাজারে পৌঁছানোর রাস্তা তৈরিতে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে বলে উদয়ন জানিয়েছেন।
ভোটে হারের ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ পুরসভা বা পুরনিগম এলাকাতেই প্রাপ্ত ভোটের দিক থেকে তৃণমূলের চাইতে বিজেপি অনেক এগিয়ে রয়েছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রভাব যে শহরাঞ্চলে খুব বেশি পড়েনি সেটাও স্পষ্ট। সৌগতও সেই কথাই তুলে ধরেছিলেন।
তবে, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের দ্বারস্থ হয়েছিল শিলিগুড়ি পুরনিগম। মেয়র তথা প্রাক্তন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীকে অবশ্য নিরাশ করেননি বর্তমান মন্ত্রী। শিলিগুড়ির জন্য ১০ কোটি টাকার প্রকল্প উন্নয়ন দপ্তরের তরফে মঞ্জুর করা হচ্ছে বলে উদয়ন জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে এদিন মুখ খোলেন দিনহাটার বিধায়ক। তবে, তাঁর নিশানায় ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। উদয়নের কথায়, ‘শুভেন্দু ক্রমাগত বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। পাশাপাশি ভোটের জন্য সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করছেন। বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ না করলে রাজ্যে অশান্তি চলবেই।’