নয়াদিল্লি: ‘মণিপুর আমার আবেগ, আমার মাতৃভূমি। আমার রাজ্য জ্বলছে। চেয়েছিলাম কিছু বলতে, কিন্তু…’ এইটুকু বলেই থমকে গেলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা মণিপুরের সাংসদ রাজকুমার রঞ্জন সিং। সতর্কভাবে এদিক-ওদিক তাকিয়ে উঠে পড়েন গাড়িতে৷
মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, টানা তিনদিন ধরে লোকসভায় চলেছে মণিপুর ইস্যুতে বিরোধী শিবিরের আনা মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা৷ বৃহস্পতিবার আলোচনার শেষদিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জবাবি ভাষণ এবং কংগ্রেসের লোকসভা দলনেতা অধীর চৌধুরীর বহিষ্কার নিয়ে এই মুহূর্তে বিতর্ক জ্বলে উঠেছে কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক মহলে। অনাস্থা বিতর্কে গত তিনদিন ধরে সমানে খোঁজ চলেছে মণিপুরের দুই সাংসদ – লর্হো এস ফোজে এবং ড. আর কে রঞ্জন সিংয়ের৷
মণিপুরের ‘ভূমিপুত্র’রা নিজ রাজ্য নিয়ে সভায় বক্তব্য রাখবে, এমনই দাবি জানিয়েছিল বিরোধী শিবির ‘ইন্ডিয়া’৷ বৃহস্পতিবার বিতর্ক চলাকালীন অসমের কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ বারবার আর্জি জানান সরকার পক্ষকে এই দুই সাংসদকে বক্তব্য রাখতে দেওয়ার জন্য৷ কিন্তু তাতে লাভ হয়নি৷ গোটা বিতর্কে ‘অন্তরাল’এই রয়ে গিয়েছিলেন মণিপুরের দুই সাংসদ।
শুক্রবার লোকসভার কাজ ‘সিনে ডাই’ ঘোষণা হলে সংসদ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে মণিপুর নিয়ে প্রথমবার মুখ খোলেন আর কে রঞ্জন সিং। উত্তরবঙ্গ সংবাদকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মণিপুরে যা হয়েছে তা চিন্তার বিষয়৷ গোটা দেশ মণিপুর নিয়ে উদ্বিগ্ন, সরকারও৷ কেন্দ্র বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। পরিস্থিতি শুধরোতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। সময় লাগলেও আস্তে আস্তে ছন্দে ফিরছে মণিপুর।’ বিরোধীরা মণিপুর নিয়ে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে, তাঁর বক্তব্য দাবি করেছে সংসদে। এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে রঞ্জন সিং জানান, তাঁরা মণিপুর নিয়ে রাজনীতি করছেন, মণিপুরের দু:খ-কষ্ট, ক্ষোভ নিয়ে রাজনৈতিক দর কষাকষি করছেন। এটা অনুচিৎ। সরকারি কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত মন্ত্রীর দাবি, ‘মণিপুর নিয়ে সরকার পক্ষের তরফে বক্তাদের তালিকা আগেই চূড়ান্ত করা হয়েছিল। আমরা বক্তব্য রাখলে তার অপব্যাখ্যা হতে পারত, তাই হয়তো… তবে যাঁরা বলেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই ভালো বক্তব্য রেখেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য চমৎকার, সবাই মণিপুর নিয়ে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন, ভূমিপুত্র হিসেবে আমি তাতেই খুশি।’
কিন্তু মণিপুরের ‘ভূমিপুত্র’ নিজেও তো কিছু বলতে পারতেন সংসদীয় পরিসরে? তাঁর কি রাজ্যের পরিস্থিতি তুলে ধরার ইচ্ছা হয়নি গোটা দেশের কাছে? এই প্রশ্নের মুখে থমকে যান আর কে রঞ্জন। জানিয়েছেন, ‘খুব ইচ্ছা ছিল বলার, কিন্তু…’ এটা বলেই থেমে যান তিনি। আর কথা বাড়াননি। দ্রুত গাড়িতে উঠে সংসদ চত্ত্বর ছেড়ে বেরিয়ে যান৷ ঠিক কী বলতে চেয়েছিলেন আর কে রঞ্জন সিং? কেন আটকে গেলেন? ‘কিন্তু’র মধ্যে দিয়ে কোন অপারগতা বা নিষেধাজ্ঞার অদৃশ্য ঘেরাটোপের কথা বলতে চাইলেন, তা অমোঘ ‘প্রশ্নচিহ্ন’ হয়েই ফুটে উঠল সংসদীয় বাদল অধিবেশনের শেষলগ্নে।