তমালিকা দে, শিলিগুড়ি: গরমের ছুটি চলছে। তার ওপর রবিবার। স্বাভাবিকভাবে স্কুল ইউনিফর্ম পরা পড়ুয়াদের দেখে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন পথচলতি মানুষ। শিলিগুড়ি(Siliguri) পুরনিগমের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ শান্তিনগর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন সরকারের উদ্যোগ বিরলই বটে। সময়মতো সিলেবাস শেষ করে ছাত্রছাত্রীদের প্রস্তুত করে দেওয়া প্রয়োজন। সেজন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা।
প্রধান শিক্ষকের(Head Master) পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হল রবিবার। এদিন থেকেই ক্লাস শুরু হয়। নাম দেওয়া হয়েছে ‘সামার মর্নিং ক্লাস’। পঠনপাঠনের পাশাপাশি পড়ুয়াদের জন্য থাকছে টিফিন। সেই খরচ ব্যক্তিগতভাবে বহন করবেন প্রধান শিক্ষক। যেমন এদিন কেক আর মিষ্টি দেওয়া হয়েছে সবাইকে। স্কুলের সামনে শান্তি সংঘ ক্লাবের একটি ঘরে অবৈতনিক শিক্ষাদান করছেন তিনি।
চিত্তরঞ্জনবাবুর ভূমিকায় খুশি অভিভাবকমহল। প্রথম শ্রেণির ছাত্রী সুপ্রিয়া মণ্ডলকে নিয়ে এসেছিলেন তার বাবা সুদর্শন মণ্ডল। বললেন, ‘অনেকদিন স্কুলে না যাওয়ার ফলে বাড়িতে নিয়মিত পড়াশোনা করছিল না। তবে প্রধান শিক্ষক ক্লাস নেবেন শুনে ও ভীষণ উৎসাহিত। খুব ভালো উদ্যোগ।’ বিশেষ ক্লাসের কথা শুনে খুশি ছাত্র প্রভাত দেবনাথের বাবা সুবল দেবনাথও।
প্রায় দেড়মাস ধরে চলছে গরমের ছুটি। পড়ুয়াদের পড়াশোনা কেমন চলছে, সেব্যাপারে খোঁজ নিতে বাড়ি বাড়ি ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’ করতেন প্রধান শিক্ষক। সেইসময় তিনি বুঝেছিলেন, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে ক্লাসের প্রয়োজন। সেই ভাবনা থেকেই সকালের বিশেষ ক্লাস শুরু। আপাতত রবি ও শুক্রবার সকাল আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা ক্লাস নেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, ‘যে কোনও প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা এখানে আসতে পারে। গরমের ছুটি শেষ হওয়া পর্যন্ত ক্লাস চলবে।’
লম্বা ছুটিতে পড়াশোনার(Study) ধারাবাহিকতা নিয়ে চিন্তায় বহু স্কুল, অভিভাবকমহল। বিশেষ করে যেসব পড়ুয়া অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের সন্তান, তাদের অধিকাংশ এইসময়ে লেখাপড়া থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কারণ, অনলাইন ক্লাসের পরিকাঠামো তাদের কাছে নেই। এছাড়া প্রয়োজনমাফিক প্রাইভেট টিউটর নিয়োগ করার ক্ষমতা থাকে না সেসব পড়ুয়াদের পরিবারের। পাশাপাশি বেশিদিন স্কুল বন্ধ থাকলে স্কুলে আসতে অনীহা তৈরি হয় ছেলেমেয়েদের মধ্যে। সেই পরিস্থিতিতে চিত্তরঞ্জনবাবুর চেষ্টা প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছে নাগরিকদের।
প্রথমদিনের ক্লাসে পনেরোজন পড়ুয়া এসেছিল। আগামীতে সংখ্যাটা আরও বাড়বে, আশা দেখছেন প্রধান শিক্ষক। তাঁকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলার রঞ্জন শীলশর্মা।