চাঁচল: চাঁচল মহকুমা আদালতে বিচারক সুরজিৎ দের এজলাসে দেওয়া হল নজিরবিহীন রায়। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার অঙ্গারমনি হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত ১৬ জনেরই এদিন সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হল। রায়কে স্বাগত জানালেন বাদী পক্ষের এবং সরকার পক্ষের আইনজীবী। যদিও রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিবাদী পক্ষ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে বলে জানা গেছে।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৬ সালের মার্চ মাসের ২৫ তারিখে। মন্দিরের জমি নিয়ে কমিটির অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত ভবতোষ সাহা ওরফে বাবলাকে সেদিন কয়েকজন মিলে বাড়ির বাইরে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর প্রকাশ্য দিবালোকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয় তাঁকে। শরীরের নয়টি জায়গায় গভীর ক্ষত পাওয়া যায় তাঁর। ২৬ তারিখ এই ঘটনায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। চার্জশিট পেশের পর চাঁচল মহকুমা আদালতে শুরু হয় শুনানি। এই ঘটনায় বিবাদী ছিলেন মোট ১৯ জন। মামলা চলাকালীন দুইজনের মৃত্যু হয়। সোমবার বিচারক সুরজিৎ দে একমাত্র মহিলা বিবাদীকে বেকসুর খালাস করেন। ১৮ জনের সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ১৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যার মধ্যে একজন ছিলেন কলকাতা পুলিশে কর্মরত এবং একজন আইনজীবী।
এদিন সাজা ঘোষণার দিকে নজর ছিল সকলের। কোর্ট চত্বরে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিকেল চারটা নাগাদ শুরু হয় শুনানি। দুই পক্ষের বক্তব্য শোনা হয়। আসামিদের বয়ান নেওয়া হয়। বাদী এবং সরকারপক্ষের আইনজীবী এই ঘটনাকে বিরলতম অপরাধ দাবি করে ফাঁসির পক্ষে সওয়াল করেন। বিচারপতি বিরলতম না মানলেও বিরল অপরাধ হিসেবে মেনে নেন। তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকান্ড বর্বরোচিত এবং নৃশংস।’ তারপরেই ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড সঙ্গে ৫০০০ টাকা জরিমানা এবং ১৪৩ ধারায় ছয় মাসের কারাদন্ড এবং হাজার টাকা জরিমানা করা হয় দোষীদের। বাদী পক্ষের আইনজীবী নীলকন্ঠ কুন্ডু বলেন,”আমরা ফাঁসির দাবী জানিয়েছিলাম।তবে এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি।মৃতের স্ত্রী দীর্ঘ নয় বছর লড়াই করেছেন।”
সরকারপক্ষের আইনজীবী সুব্রত রায় বলেন,”শরীরে নয়টি আঘাত ছিল। সে ক্ষেত্রে ফাঁসির দাবি জানিয়েছিলাম।”
সরকারপক্ষের আইনজীবীর ইনচার্জ চিন্ময় মিশ্রর বক্তব্য,”এই আদালতে যাবজ্জীবন সাজার নির্দেশ এই প্রথম।”
মৃতের স্ত্রী ললিতা রানী মন্ডল সাহা বলেন,”ফাঁসির সাজা হলে আমার স্বামীর আত্মা শান্তি পেত। যাবজ্জীবন কারাদন্ডের নির্দেশ হল। রায় মেনে নিচ্ছি।”
বিবাদী পক্ষের আইনজীবী তন্ময় দাসের দাবি,”আমরা এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে যাব।”