পুকুরে মাছ ধরা নিয়ে অশান্তি, পুলিশের সামনেই মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা পূর্ব বর্ধমানে

বর্ধমানঃ এ যেন মগের মুলুকের মত ব্যাপার। পুকুর থেকে মাছ ধরা নিয়ে তৈরি হয়েছিল অশান্তি। আর তার জবাব চাইতে লাঠি ডাণ্ডা নিয়ে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রীর বাড়িতে চড়াও হল পঞ্চায়েত এলাকার একদল বাসিন্দা। যা নিয়ে মঙ্গলবার বিকালে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের রায়নার কামারহাটি গ্রামে। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ঘটনার কথা জেনে বিস্মিত পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। তাঁর আশঙ্কা, এই ঘটনার পিছনে বিরোধীদের উস্কানি থাকলেও থাকতে পারে!

রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের পৈত্রিক বাড়ি রয়েছে রায়না ২ নম্বর ব্লকের গোতান গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কামারহাটি গ্রামে। শুধু বসত বাড়ি নয়, ওই গ্রামে রয়েছে মন্ত্রীর পরিবারের একাধিক পুকুর ও জমিজমা। মন্ত্রিত্ব সামলে মাঝে মধ্যে কলকাতার বাড়ি থেকে পৈত্রিক বাড়িতে যাওয়া আসা করেন মন্ত্রী। এদিন, লাঠি ডাণ্ডা নিয়ে মন্ত্রীর বাড়িতেই এদিন বিকালে চড়াও ক্ষুব্ধ একদল গ্রামবাসী। অভিযোগ, তারা বাড়ি লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোঁড়া পাশাপাশি তির-ধনুক নিয়ে মন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। ভাঙচুর করা হয় এলাকার তিন মাছ-চাষির বাড়ি। কেন মহেন্দ্র হেমব্রম নামে এলাকার এক বাসিন্দাকে মন্ত্রীর বাড়ির কেয়ারটেকার ও তার দলবল নির্মম ভাবে মরধোর করেছে, তার বিহিত চাইতেই মূলত ক্ষুব্ধ মানুষজন এদিন মন্ত্রীর বাড়ির বিক্ষোভে ফেটো পড়েন।

এলাকার বাসিন্দাদের কথায় জানা গিয়েছে, কাউকে কিছু না জানিয়ে মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের পৈত্রিক পুকুর থেকে মাছ ধরা নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় অশান্তি ছড়ায়। মাছ ধরা নিয়ে মহেন্দ্র হেমব্রম নামে এলাকার এক বাসিন্দাকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে মন্ত্রীর বাড়ির কেয়ারটেকারে  বিরুদ্ধে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, মহেন্দ্রকে মন্ত্রীর বাড়ির মধ্যে তুলে নিয়ে নিয়ে গিয়ে তাকে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করা হয়। সেই খবর পেয়েই মাধবডিহি থানার পুলিশ গিয়ে তখনকার মত পরিস্থিতি সামাল দেয়। তবে মারধোরের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ স্তিমিত হয় নি। মঙ্গলবার বিকেলে এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ ফের আছড়ে পড়ে পঞ্চায়েত মন্ত্রীর পৈত্রিক বাড়িতে।

এ নিয়ে পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, আমরা তো ওই বাড়িতে সবসময় থাকি না। মাঝে মধ্যে যাই। সাংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের কাছ থেকে এদিন জানতে পারি পুকুর থেকে মাছ ধরা নিয়ে সমসা তৈরি হয়েছিল। আমাদের তিনটি পুকুর রয়েছে। গ্রামেরই কিছু ছেলে আমাদের পুকুর গুলিতে নিজেরা অর্থ খরচ করে মাছ চাষ করে। ওরাই পুকুর দেখভালও করে। শুনেছি ওই পুকুর থেকে কেউ মাছ চুরি করছিল। যাঁরা মাছ চাষ করে তাঁরা সেই জন্যে প্রতিবাদ করেছে। এর সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।

প্রদীপ মজুমদার আরও বলেন, ‘কামারহাটি গ্রামে সবসময় সব নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস জিতে থাকে। আমাদের সরকার অনেক উন্নয়ন কাজ করেছে। সেই সবের রাগ হয়তো আমার বাড়িতে প্রতিফলিত হয়ে থাকতে পারে। এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এমনটা না হওয়াই কাম্য ছিল। গোটা  ঘটনার পিছনে বিরোধীদের উস্কানি থাকতে পারে।’ এমন আশঙ্কার বিষয়টিও উড়িয়ে দেন নি পঞ্চায়েত মন্ত্রী। ঘটনা বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, “এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয় নি। তবে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। আমরা মামলা করব।”

তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন,“সিপিএম ও বিজেপির উস্কানিতেই মন্ত্রীর ফাঁকা বাড়িতে ভাঙচুর চালান হয়েছে।” রায়না ২ ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি সৈয়দ কলিমুদ্দিন বলেন, “রাজনৈতিক লাভের জন্যে ছোট একটা ঘটনাকে বড় ঘটনা করে তুলল বিরোধীরা।”

যদিও সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মির্জা আখতার আলি বলেন, “এটা সাধারণ মানুষের অধিকারের প্রশ্ন, সে জন্যে গ্রামবাসীরা নির্মমতার বিরুদ্ধে একত্র হয়েছেন। আমরা অন্যায়কে তো আর ন্যায় বলতে পারি না।“ বিজেপির জেলা সম্পাদক (কাটোয়া) মাণিক রায় বলেন, “তৃণমূলের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষ ফুঁসছে।“