অরুণ ঝা, ইসলামপুর: চোখের সামনে ভরাট হয়ে যাচ্ছে পুকুর। রোজ তাতে পড়ছে লরি লরি বালি। একটু একটু করে ‘মরে যাচ্ছে’ আস্ত জলাশয়টি। ইসলামপুর (Islampur) শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের শিবডাঙ্গিপাড়ায় প্রকাশ্যে জলাভূমি ভরাট হলেও প্রতিবাদ করার কেউ নেই।
ভেড়ানি পুকুরের অনেকটা অংশ দখল করে ইতিমধ্যে বেশকিছু পাকা বাড়ি গজিয়ে উঠেছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে পুরসভার কাউন্সিলার এবং ইসলামপুর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের ভূমিকা নিয়ে। শুক্রবারও জলাভূমি ভরাট চলেছে অবাধে। যদিও উত্তরবঙ্গ সংবাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছাতেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক ভূপেন সুব্বা যেমন টিম পাঠিয়ে ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন, তেমনই ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলার অর্পিতা দত্ত জলাভূমি ভরাট রুখতে যথাযথ পদক্ষেপ করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন, এতদিন কি তাঁদের চোখে কালো কাপড় বাঁধা ছিল? নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনও রহস্য?
ইসলামপুর শহর এবং শহর সংলগ্ন এলাকায় গত দুই দশকে প্রশাসনের নাকের ডগায় একের পর এক জলাভূমি লোপাটের নজির রয়েছে। জমি মাফিয়াদের দাপটে এবং প্রভাবশালী যোগে জলাভূমি ভরাটের বিরুদ্ধে কড়া আইন থাকলেও কার্যত সবই লাটে উঠেছে। এদিন শিবডাঙ্গিপাড়ায় জলাভূমি ভরাটের ঘটনা সামনে আসতেই ফের একবার বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
এদিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা গেল, বিশাল ওই জলাভূমি থেকে জল বের করার জন্য পাম্পসেট বসানো হয়েছে। সঙ্গে ট্র্যাক্টরে করে মাটি এনে জলাভূমি ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। সহজে যাতে কারও নজরে না পড়ে তার জন্য ঘেরা দেওয়া হয়েছে।
শিবডাঙ্গিপাড়ার ওই এলাকার জলাভূমি ও ভেড়ানি পুকুরটি ব্যক্তিগত মালিকানায় রয়েছে। কয়েক বছর ধরেই এই পুকুরের চারপাশ দিয়ে জলাভূমি দখল হচ্ছিল একটু একটু করে। এবার কার্যত পুরো পুকুরটাই বুজিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিন এলাকা ঘুরে পুকুরের মালিক কে, সেই খোঁজ করলেও কেউ সদুত্তর দিতে পারেননি।
স্থানীয়দের একজন বলছেন, ‘একের পর এক জলাভূমি লোপাট হয়ে গিয়েছে। সকলেই সব জানে। কিন্তু যাঁদের হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, তাঁরা কার্যত নীরব দর্শক সেজে আছেন।’ বিশিষ্ট পরিবেশকর্মী তথা ইসলামপুর সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ পার্থ ভদ্রর কথায়, ‘একের পর এক জলাভূমি ভরাটের জেরে ভূগর্ভস্থ জলস্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে জলাভূমিকে কেন্দ্র করে থাকা বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হচ্ছে। ইসলামপুরে জলাভূমি নিয়ে উদাসীনতা আগামী দিনের জন্য মারাত্মক পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।’
শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অপ্সরা মোড়ে পুকুর দখল করে আস্ত দালানবাড়ি গড়ে উঠেছে। আবর্জনা ফেলতে ফেলতে ওই পুকুর বর্তমানে বুজে আসার জোগাড়। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আস্ত একটি পুকুর ভূমি সংস্কার দপ্তর ও জমি মাফিয়াদের যোগে সরকারি নথিতে ‘বাস্তুভিটা’ বলে রেকর্ড হয়েছিল। গতবছর উত্তরবঙ্গ সংবাদে সেই খবর প্রকাশিত হতেই আলোড়ন পড়ে যায়। পরে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে রেকর্ড সংশোধন করা হয়। ফলে শিবডাঙ্গির জলাভূমি ভরাটের আড়ালেও এমন কোনও চক্র সক্রিয় কি না, তা নিয়ে চর্চা চলছে।
কাউন্সিলার বলছেন, ‘জলাভূমি ভরাট আইনবিরুদ্ধ কাজ। আমি খোঁজ নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ করব।’
ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের বক্তব্য, ‘জলাভূমি ভরাট বরদাস্ত করার প্রশ্নই নেই। আমি টিম পাঠিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। কড়া ব্যবস্থা নিতে দপ্তর পিছপা হবে না।’