উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: চলে গেলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কলকাতার রাজপথ ধরে যখন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শববাহী গাড়ি ধীরে ধীরে এগোচ্ছে পিস হেভেনের দিকে, ঠিক তখন শিলিগুড়িতে নিজের বাড়িতে বসে চোখের কোণে জল ছলছল করছে একদা সহকর্মী, কাছের মানুষ কমরেড অশোক ভট্টাচার্যের। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দু’জনেই একসঙ্গে দেখেছেন নানান চড়াই-উতরাই। সাক্ষী থেকেছেন বহু ভালো-মন্দের। আজ তিনি নেই, তাঁর অনুপস্থিতিতে তাই স্মৃতিচারণে মজলেন শিলিগুড়ির প্রাক্তন বিধায়ক, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র।
আজ সকালে যখন বুদ্ধদেবের জীবনাবসানের খবর সামনে আসে, কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন বাম আমলের পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। বেলা গড়াতেই তাঁর শিলিগুড়ির বাসভবনে বাড়তে থাকে সংবাদমাধ্যমের ভিড়। গলায় কান্না চেপে স্মৃতিচারণায় মেতে ওঠেন অশোকও। দক্ষ প্রশাসক বুদ্ধদেব আসলে কেমন মানুষ? জানতে চাইলে বামনেতা জানান, ‘আবেগপ্রবণ, সৎ, ছোটখাটো যেকোনও বিষয়ে দলের সদস্যদের কিভাবে সম্মান করতে হয় উনি জানতেন। শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, সারা ভারতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।’
তিনি ভবিষ্যতকে দেখতে পেতেন। রাজ্যে কাজ নেই। তরুণ প্রজন্ম চলে যাচ্ছে ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে। এই বিষয়টি কোথাও যেন নাড়া দিয়েছিল বুদ্ধদেবকে। এই প্রসঙ্গে অশোক বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের যাতে নিজের রাজ্যে কাজ হয়, সে কারণে শিল্পায়ন চেয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। জ্যোতি বসু শিল্পায়নের যে বীজ বপন করেছিলেন, বুদ্ধদেব তা মহীরুহে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মহীরুহ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়।’
বুদ্ধদেবের মৃত্যুর পর থেকে একটা আলোচনা উঠে এসেছে প্রশাসক হিসেবে কে এগিয়ে। জ্যোতি বসু নাকি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য? এই প্রশ্নের জবাবে প্রাক্তন মেয়র বলেন, দু’জনেই যোগ্যতা সম্পন্ন। প্রশাসক হিসেবে দু’জনের মধ্যে তেমন কোনও প্রার্থক্য নেই। তবে বুদ্ধবাবু ছিলেন ঠাণ্ডা মাথার লোক। যেকোনও কাজ আলোচনার মাধ্যমে করাতেই তিনি প্রাধান্য দিতেন।’ না এতটুকুতেই শেষ হবে না বুদ্ধদেবের মত একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের স্মৃতিচারণা। অনেক কথাই যেন ভিড় করে এসেছিল অশোকের মনে। শেষে শুধু একটা কথাই বললেন, ‘কোথাও কোনও বাহুল্যতা নেই। একেবারে বাড়ির মানুষের মত ছিলেন বুদ্ধদেব।’