Thursday, February 13, 2025
Homeসম্পাদকীয়দু’পক্ষেরই লক্ষ্যে সাত

দু’পক্ষেরই লক্ষ্যে সাত

গোটা বিশ্ব যেদিকে তাকিয়ে, সেই বহু প্রতীক্ষিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগামীকাল ৫ নভেম্বর। মঙ্গলবার চূড়ান্ত পর্যায়ের ভোটগ্রহণ সে দেশের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে। সর্বশেষ জনমত সমীক্ষা সত্যি হলে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের লড়াই হবে সমানে-সমানে।

১৯৬৮ সালে লিন্ডন বি জনসনের পর জো বাইডেনই প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি অঙ্গরাজ্যগুলোর প্রাইমারিতে দারুণ সাফল্য পেলেও বার্ধক্য এবং অসুস্থতার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। একইভাবে ১৯৬৮ সালে হুবার্ট হামফ্রির পর কমলা হ্যারিস প্রথম ব্যক্তি, যিনি প্রাইমারিতে অংশ না নিলেও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হয়েছেন। ২০০৮ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই হত শুধু শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে।‌ আবার ২০১৬ সালে ট্রাম্পের কাছে সামান্য ব্যবধানে না হারলে হিলারি ক্লিন্টনই প্রথম মহিলা মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইতিহাস গড়তেন।

তাই এবারের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সব অর্থে ঐতিহাসিক।‌ মার্কিন মুলুকে ‘নস্ত্রাদামুস’ বলে পরিচিত অ্যালান লিচম্যান অবশ্য ভবিষ্যদ্বাণী করে রেখেছেন, কমলা হ্যারিসই দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। হ্যারিসের মামাবাড়ি ভারতের তামিলনাডুতে। দাদু ব্রিটিশ জমানা এবং স্বাধীনোত্তর ভারতের আমলা। মা ছিলেন ক্যানসার গবেষক।

বিপরীতে অধিকাংশ বয়স্কের পছন্দ ট্রাম্প। করোনা, অভিবাসী সমস্যা মোকাবিলায় বাইডেনের ব্যর্থতার কারণে একশ্রেণির ভোটার বরারবই ট্রাম্প সমর্থক। বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন এবং প্যালেস্তাইন-লেবাননে ইজরায়েলি হানা নিয়ে হ্যারিসের বিরুদ্ধে সরব ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রধান বৈশিষ্ট্য, ভোটাররা সরাসরি নির্বাচিত করেন প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্টকে। মার্কিন প্রতিনিধি সভার ৪৩৮ এবং সেনেটের ১০০ মিলিয়ে মোট ৫৩৮ জনের ইলেক্টোরাল কলেজ।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে হলে কোনও প্রার্থীকে ইলেক্টোরাল কলেজে গরিষ্ঠতা অর্থাৎ ২৭০টি ভোট পেতেই হবে। নির্বাচনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য, অঙ্গরাজ্যের মধ্যে কিছু আছে ‘রেড স্টেট’, যেগুলো রিপাবলিকানদের ঘাঁটি। কিছু আছে ‘ব্লু স্টেট’, যেগুলো ডেমোক্র্যাটদের ভোটব্যাংক। এর বাইরে আছে সাতটা ‘সুইং স্টেট’- অ্যারিজোনা, নেভাডা, উইসকনসিন, মিশিগান, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা ও পেনসিলভেনিয়া। এগুলোতে মুসলিম ও সংখ্যালঘুরা সংখ্যায় বেশি। এই সাতের মধ্যে কার দখলে ক’টা গেল, তার ওপরে নির্ভর করছে জয়পরাজয়।

লড়াইয়ে যতদিন বাইডেন ছিলেন, ততদিন সমীক্ষায় ট্রাম্প ছিলেন এগিয়ে। তার মধ্যে ট্রাম্পের সভায় আততায়ীর হামলা ঘটেছিল। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। বাইডেন সরে দাঁড়ানোর পর হ্যারিস প্রার্থী হতে ছবিটা বদলাতে থাকে। হলিউড, রিপাবলিকান দলের একাংশ, চিন-রাশিয়ার মতো কিছু বিদেশি রাষ্ট্র প্রকাশ্যে কমলার পাশে দাঁড়ায়। তা সত্ত্বেও দু’পক্ষের লড়াই জোরদার হবে বলে অনুমান। ভোটের প্রচারে গুরুত্ব পেয়েছে অভিবাসন, সীমান্ত-নিরাপত্তা, শিক্ষা, গর্ভপাত, অর্থনীতি, এলজিবিটিকিউ অধিকার ও স্বাস্থ্য-পরিষেবার মতো বিষয়গুলো।

এই নির্বাচন ভারতের জন্যও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক মার্কিন সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুধু বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। অথচ ২০১৬-র ভোটে মোদি ট্রাম্পের হয়ে গলা ফাটিয়েছিলেন। ট্রাম্প মোদিকে বিশেষ বন্ধু বলে সম্বোধন করেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ভারত সফরে সপরিবার এসেছিলেন ট্রাম্প। প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত-মার্কিন বেশ কিছু দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি আগেই হয়ে রয়েছে। আমেরিকার অর্থনীতির সঙ্গে নানাভাবে তাই জড়িয়ে আছে ভারতের স্বার্থ।

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রও মার্কিন ভোটের দিকে তাকিয়ে। টিসিএস, উইপ্রো, টেক মাহিন্দ্রার মতো বহু সংস্থার অধিকাংশ ক্লায়েন্ট আমেরিকার।‌ এইসব সংস্থার বার্ষিক আয়ের অর্ধেকের বেশি আসে মার্কিন মুলুক থেকে। তাই ট্রাম্প বা হ্যারিস, যিনিই জিতুন, ভারতের প্রেক্ষাপটে তার তাৎপর্য যথেষ্ট।

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img
[td_block_21 custom_title="LATEST POSTS"]

Most Popular