শুভ্রজ্যোতি রাহা, ডালখোলা: স্কুলে স্কুলে শিক্ষক সংকট। শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত তো মিলছেই না, উলটে পরিস্থিতি এমন যে পরীক্ষার হলে গার্ড দেওয়ারও শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। অগত্যায় পড়ুয়াদের মধ্যে থেকেই কয়েকজন ইনভিজিলেটর হিসেবে শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছে। কোনও কল্পকাহিনী নয়। উত্তর দিনাজপুরের (Uttar Dinajpur) ডালখোলা হাইস্কুলে (Dalkhola High School) বাস্তব চিত্র এটাই।
সুপ্রিম-নির্দেশে চাকরি বাতিল হয়েছে স্কুলের ছয়জন শিক্ষকের। বর্তমানে ডালখোলা হাইস্কুলে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৪ জন। এই স্বল্পসংখ্যক শিক্ষক দিয়ে স্কুল চালানো প্রায় অসম্ভব। এদিকে স্কুলে শুরু হয়েছে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির ফার্স্ট সামিটিভ পরীক্ষা। কিন্তু এতগুলো ঘরে গার্ড দেবে কে ? পর্যাপ্ত শিক্ষকই তো নেই। অবশেষে পরিস্থিতি সামাল দিতে ডাক পড়ল উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের। বুধবার পরীক্ষার হলে গার্ড হিসাবে দায়িত্ব সামলাল স্কুলেরই একাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা।
ডালখোলা হাইস্কুলে তিনটি মিডিয়ামে পঠনপাঠন হয়। আদালতের রায়ে এসএসসির প্যানেল বাতিল হওয়ায় আগে থেকেই স্কুলের মোট ২২ টি শূন্যপদ ছিল। তার উপর নতুন করে ৬ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হওয়ায় স্কুল চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক সুকুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ৬ জনের চাকরি বাতিল হওয়ায় আবার নতুন করে পরীক্ষার সমস্ত পরিকল্পনা করতে হয়েছে।’
এবছর পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৪৭৩ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা পরিচালনার জন্যে ২২ টি রুমে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিটি বেঞ্চে ৪ জন করে পরীক্ষার্থী বসিয়ে ঘরের সংখ্যা ২২ থেকে কমিয়ে ১৮ করা হয়। প্রধান শিক্ষক সুকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘নিরুপায় হয়ে আমরা স্কুলের একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের পরীক্ষার গার্ড হিসাবে নিতে বাধ্য হয়েছি। প্রতিটি ঘরে একজন শিক্ষক ও একজন একাদশের পড়ুয়াকে ইনভিজিলেটর হিসেবে রেখে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।’
এদিকে অনুজদের পরীক্ষায় গার্ড দিয়ে এক নতুন অনুভূতির সম্মুখীন হল একাদশের পড়ুয়ারা। এদিন ইনভিজিলেটরের দায়িত্ব সামলেছে একাদশের ছাত্রী কেয়া বাড়ই। তার কথায়, ‘একেবারেই অপ্রত্যাশিত নতুন অভিজ্ঞতা। স্যরদের সঙ্গে আমরাও আমাদের জুনিয়ারদের পরীক্ষায় ইনভিজিলেটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি।’