শিলিগুড়িঃ বাঙালির মাছের প্রতি দরদ নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন পরেশ রাওয়াল। কিন্তু বাস্তবে তিনি তো কটাক্ষ করেননি, বরং যেন আগুনে ঘি ঢেলেছিলেন। যার পরিণতি কী হতে পারে পরবর্তীতে বুঝতে পেরেছিলেন ভারতখ্যাত এই অভিনেতা। বাঙালির যে হাড়মজ্জার সঙ্গে জড়িত মাছ-ভাত, তা বুঝতে পেরে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন একপ্রকার বাধ্য হয়ে। কিন্তু অশ্বিনী বৈষ্ণোর মন্ত্রকের হঠাৎ কেন দরদ হল বোঝা না গেলেও, বাঙালির মুখে হাসি ফুটিয়ে হাওড়া-এনজেপি বন্দে ভারতে চালু হচ্ছে মাছ-ভাত। যা পুজোর মুখে মূলত বাঙালি যাত্রীদের কাছে বাড়তি পাওনা হিসেবে দেখছেন রেলকর্তারা।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলছেন, ‘অন্যান্য মেনুর সঙ্গে মাছ-ভাত চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে যাত্রীরা তাঁদের পছন্দের মেনু বেছে নিতে পারবেন। আমাদের আশা এই সিদ্ধান্ত অনেক যাত্রীকে খুশি করবে।’ হাওড়া-এনজেপি বন্দে ভারতের মালিকানা যেহেতু পূর্ব রেলের অধীনে রয়েছে, তাই এই সিদ্ধান্তের কথা তাঁরা এখনও জানেন না বলে দাবি করেন উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখনও আমাদের কিছু জানা নেই। আশা করছি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকলে তা পূর্ব রেলের তরফে আমাদের জানানো হবে।’
বাঙালির পায়ের তলায় নাকি সর্ষে রয়েছে। তাই ছুটি পেলেই লটবহর নিয়ে বেরিয়ে পড়েন চেনা-অচেনা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। তেমন ভাবেই বাঙালির পরিচয় মাছে-ভাতে। বিশ্বের যে প্রান্তেই বাঙালি পা রাখুক না কেন, প্রথমে তাঁরা খোঁজ করেন মাছ-ভাত কোথায় পাওয়া যাবে? বন্দে ভারত এক্সপ্রেস এরাজ্যের বাঙালিদেরও যাত্রা গতিশীল করলেও, যাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিলেও, আক্ষেপ তো ছিলই মেনুর তালিকায়। অথচ মেনু তালিকা কিন্তু নানা পদে সুসজ্জিত। মেনুতে ডিমের কষা, চিকেন কারি যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে ত্রিকোনা পরোটা থেকে ছোলার ডালনা সহ আরও রকমারি খাবার। কিন্তু যাত্রা পথে ঘড়ির কাটা দুপুর গড়ালেই যাত্রীদের সিংহভাগের দীর্ঘশ্বাস শুরু হয়ে যায়। মূলত হাওড়া-এনজেপি বন্দে ভারতে। পূর্ব রেল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে এখন থেকে দীর্ঘশ্বাসের পরিবর্তে যাত্রীদের বড় অংশ যেন অপেক্ষা করবেন দুপুরের জন্য। কেননা, দুপুরেই মিলবে মাছ-ভাত। দুপুরের খাবারে বৈচিত্র আনতে মাছ-ভাতের পাশাপাশি বাসন্তী পোলাও, ধোকা, ফিস ফ্রাই, সোনামুগের ডাল থাকছে। সঙ্গে যথারীতি চিকেন এবং ডিমও থাকবে। তবে সমস্তটাই অপশনাল। নিজেদের পছন্দ মতো বেছে নিতে হবে যাত্রীদের।
বন্দে ভারত চালুর মধ্যে দিয়ে ভারতীয় রেলে যেমন এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে, তেমনই যেন হাওড়া-এনজেপি বন্দে ভারতে মাছ-ভাত চালুর সিদ্ধান্ত যেন ভারতীয় রেলের এক বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত। আর তাতেই প্রশ্ন উঠেছে, এমন মেনু তালিকা থেকে আর কতদিন দূরে থাকবে শতাব্দী এক্সপ্রেস?