বালুরঘাট: বেতন নেই। কিন্তু তাই বলে কাজ থমকে নেই। গত তিন মাস ধরে সাম্মানিক বন্ধ হয়ে রয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার শতাধিক গ্রামীণ সম্পদকর্মীর। তার সঙ্গে পঞ্চায়েতস্তরে নিযুক্ত ভেক্টর কন্ট্রোল টিমের কর্মীদেরও বেতন আটকে রয়েছে। দৈনিক মাত্র ১৭৫ টাকার মজুরি হলেও সেই টাকা বহুবার দরবার করেও পাচ্ছেন না তাঁরা।
বালুরঘাট ব্লকের গ্রামীণ সম্পদ কর্মী আব্দুল মান্নান সরকার জানান, কোথাও যদি জল জমে থাকে বা নর্দমা কাটতে হয় কিংবা লার্ভাসাইট স্প্রে করার প্রয়োজন থাকে, সমস্ত তথ্য তুলে নিয়ে আসি। তারপরে আরেকটি দল গিয়ে সেগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু তিন মাস ধরে সাম্মানিক বন্ধ রয়েছে।
কুমারগঞ্জ ব্লকের ভিআরপি ধনঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘কখনই আমাদের বেতন নিয়মিত দেওয়া হয় না। বকেয়া জমতেই থাকে। এমনকি ছয় মাসের বকেয়াও থেকে যায়। কখনও এক মাসের আবার কখনও দু মাসের দেওয়া হয়। এবার সাড়ে তিন মাস ধরে এই বেতন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কাজ বন্ধ নেই। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার্ভে করে ভিসিটির সাহায্যে পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের কাজ করি। আমাদের হাত ধরেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। কিন্তু আমাদেরই বেতন দেওয়া হচ্ছে না।’
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগ এই বিষয়টি দেখাশোনা করে। দপ্তরের তরফে জানা গিয়েছে, বেতনের টাকা ধীরে ধীরে আসছে। তারা বেতন পেয়ে যাবেন। এই নিয়ে প্রকল্প আধিকারিক শামসুল আলমের সঙ্গে কথা হলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেন। এই বিষয়ে জেলাশাসক ও অতিরিক্ত জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
প্রতিবছরই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রবণতা বাড়ছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে নয়জন ভিআরপি এবং ছয়জন ভিসিটি নিযুক্ত থাকেন। প্রথম পর্যায়ে ভিআরপিরা গিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সার্ভে করে ভিসিটিদের জানান। তারপর তাঁরা এলাকায় পৌঁছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। মাসের প্রতিটি দিন তাঁরা কাজ করেন। এর জন্য দৈনিক মজুরি মেলে ১৭৫ টাকা করে। কিন্তু প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে সেই সাম্মানিক তাঁরা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
আর এই বকেয়া জেলায় এক দুজনের নয়। প্রায় হাজার ভিসিটি ও ভিআরপি মিলিয়ে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রচুর। সর্বসাকুল্যে প্রায় দেড় কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। কোনও বেতন ছাড়াই বর্তমানে তাঁরা কাজ করে চলেছেন। এই নিয়ে জেলা শাসককে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু কোনও সাড়া পাননি।