মাদারিহাট: ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। কানায় কানায় ভরা উত্তাল তোর্ষা নদী। সেই নদীর মাঝখান দিয়ে ভেসে চলেছে একটি হস্তীশাবক। চোখে পড়ে যায় টহলরত বনকর্মী শ্যারন সুব্বা, জাহাঙ্গির আলি, বিপ্লব দাস এবং নারাসিং রাভার। নিজেদের জীবন বিপন্ন করে চারজন ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন শাবকটিকে বাঁচাতে। তুলে আনেন পাড়ে। নিজেদের জামাকাপড় খুলে আগুন ধরিয়ে সারারাত সেঁক দেন।
মাত্র তিনদিন বয়সের শাবকটি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হলং সেন্ট্রাল পিলখানায়। মাহুত শ্যারন সুব্বার হাতে শাবকটির লালনপালনের দায়িত্ব তুলে দেন প্রাণী চিকিৎসক উৎপল শর্মা। এরপর শুরু হয় ওকে বাঁচানোর লড়াই। এর আগে আগুনে ঝলসে যাওয়া রামু হাতিকে বাঁচানোর অভিজ্ঞতা ছিল শ্যারনের। সেজন্য তাঁর ওপরেই এই গুরুদায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। এখন সেই হস্তীশাবকটির বয়স চারের কোঠায়। সেদিনের হস্তীশাবক বীরকে এবার জলদাপাড়ায় টহলদারির কৌশল শেখানো হচ্ছে। কৌশল শেখাচ্ছেন বর্তমান মাহুত রোহিত ইসলাম, প্রাণী চিকিৎসক উৎপল শর্মা সহ অন্য বনকর্মীরা।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বিভাগীয় বনাধিকারিক পারভিন কাশোয়ানের কথায়, ‘জলদাপাড়ার বন এবং বন্যপ্রাণীদের রক্ষার জন্য বীরকে টহলদারির কৌশল শেখানো হচ্ছে। ওর মধ্যে টহলদারির সমস্ত গুণ আছে। সাধারণত দাঁতাল হাতিরা খুব সাহসী এবং পরিশ্রমী হয়। আর বীর দাঁতাল হাতি হয়ে উঠছে।’ একই কথা বললেন জলদাপাড়ার প্রাণী চিকিৎসক উৎপল শর্মা। তিনি জানান, বীরের শারীরিক গঠনও খুব ভালো।
এদিকে, সেদিনের কথা মনে করে উৎপল আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। জানান, মাত্র তিনদিন বয়সের হস্তীশাবককে জল থেকে তুলে আনা হয়েছিল। তারপর তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। কী করবেন, কিছুক্ষণের জন্য ভেবে উঠতে পারছিলেন না। ঈশ্বরকে ডাকছিলেন ওকে বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য। সেইমতো তাঁর চেষ্টা এবং অভিজ্ঞ মাহুত শ্যারন সুব্বার যত্নে সে যাত্রায় বেঁচে যায় বীর। এখন তো তার নামের সঙ্গে কাজের মিল পাওয়া যাচ্ছে। ভয়ডরহীনভাবে জঙ্গলের ভেতর চলাফেরা করে।
শ্যারন বলেন, ‘দুইবছর ধরে নিজের সন্তানের মতো ওকে লালনপালন করেছি। নদী থেকে তুলে আনার পর হলং সেন্ট্রাল পিলখানায় রাখা হয়। সেখানে লেপ-তোশক বানিয়ে বিছানা তৈরি করে রাখা হয়। ফল, দুধ খেতে দেওয়া হত। সবাই বলেছিলেন বাঁচবে না।’ শ্যারন বীরকে নিজের সন্তানের মতোই আগলে রেখেছিলেন। ওকে বাঁচিয়ে তুলে দেখিয়ে দিয়েছিলেন, মন থেকে ভালোবাসলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।