নাগরাকাটা: জীবনে লড়াই করার তাগিদ ও সদিচ্ছা থাকলে একদিন সাফল্য আসবেই। কথাটা আরও একবার প্রমাণ করলেন বানারহাটের বিকাশ ঝা নামে এক তরুণ। দারিদ্র্যকে হার মানিয়ে এখন বিকাশ বায়ুসেনার ফ্লাইং অফিসার। বিকাশের সাফল্যে খুশির আমেজ দেখা দিয়েছে এলাকায়। বানারহাটের বিডিও নিরঞ্জন বর্মন বলেন, ‘বিকাশকে কুর্নিশ। ভবিষ্যতে আরও শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি। বিকাশকে দেখে অন্য পড়ুয়ারাও উদ্বুদ্ধ হবে বলে আশা করছি।’
বিকাশের সাফল্য নিয়ে প্রতিবেশী সীতা ছেত্রীর বক্তব্য, ‘বিকাশ শুধু পড়াশোনায় ভালো তা নয়, তার মতো ভদ্র ও নম্র স্বভাবের তরুণ খুব কমই দেখেছি। বড়দের সম্মান করতে তার জুড়ি মেলা ভার। পাড়ার অন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে এখন সে আইকন।’
ছোটবেলা থেকে বিকাশের লক্ষ্য ছিল বায়ুসেনায় যোগ দেওয়া। স্বপ্নের উড়ানের বৃত্ত সম্পূর্ণ করে তিনি থামতে চাইছেন না। এক বছরের প্রশিক্ষণ শেষে শনিবার কাজে যোগ দেওয়ার আগে মহাবীর বস্তিতে ভাড়াবাড়ির কাঠের দাওয়ায় বসে তাঁর বক্তব্য, ‘দেশের জন্য নিজের সেরাটুকু দিতে চাই। আমাকে দেখে যদি অন্যরা জীবনের লক্ষ্য পূরণে পড়াশোনাকে হাতিয়ার করে এগিয়ে আসে তবেই নিজের পরিশ্রম সার্থক মনে করব। এখন আমি মা-বাবার পাশে দাঁড়িয়ে পরিবারের অভাব দূর করতে চাই।’
বিকাশের বাবা ভগেশ্বর ঝা বানারহাটের চামুর্চি মোড়ে পান বিক্রি করেন। মা কিরণ ঝা সংসার সামলান। বিকাশ ছাড়াও ওই ঝা দম্পতির দুই কন্যাও রয়েছেন। তাঁরাও পড়াশোনায় ভালো। বড় মেয়ে নেহা বর্তমানে অঙ্ক নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করছেন। ছোট মেয়ে রীতা কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে কলেজে পড়ছেন।
বিকাশ ২০১৯ সালে শিলিগুড়ি কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক হয়েছিলেন। তখন থেকে তিনি বায়ুসেনার আধিকারিক হওয়ার পরীক্ষা দিতে শুরু করেন। ২০২৩ সালে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পান। এক বছরের প্রশিক্ষণের পর তিনি এখন ফ্লাইং অফিসারের দায়িত্ব পান।
ভগেশ্বর নিজের আবেগ কোনওরকমে সামলে বলেন, ‘কত কষ্ট করেছি শুধু ছেলের এই সাফল্যের দিনটি দেখব বলে। ওর মায়ের আত্মত্যাগ আরও বেশি। আজ বিকাশের জন্য আমাদের গর্ব হচ্ছে।’ মা কিরণের কথায়, ‘পানের দোকানের স্বল্প আয়ে সংসারের ভরণপোষণ চলত। ছেলেমেয়ের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। আজ আমার বড় আনন্দের দিন। কী বলব ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’