উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ মণিপুরের হিংসার রেশ এবার ছড়িয়ে পড়ল পড়শি রাজ্য মেঘালয়েও। শুক্রবার বিকেলের পর থেকে অশান্ত হয়ে ওঠে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের কাছে নোংরাম হিল অঞ্চলে। সেখানে কুকি এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে শিলং পুলিশ। নতুন করে অশান্তির ঘটনা এড়াতে মেঘালয় পুলিশের তরফে চরম পদক্ষেপ গ্রহনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
উপজাতিদের আন্দোলনে এখনও অশান্ত মণিপুর। রাজ্যের স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল। সে রাজ্যের হিংসার রেশ এ বার এসে পৌঁছল পড়শি রাজ্য মেঘালয়েও। মণিপুরে ঘটনার সূত্রপাত হয় গত বুধবার। সেদিন মণিপুরি ছাত্র সংগঠন অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর এর এর তরফে আন্দোলনকারী মেইতেই জনগোষ্ঠীর দাবির বিরোধিতা করে একটি মিছিল বার করা হয়েছিল। সেখান থেকেই মণিপুরের ৮টি জেলায় হিংসা ছড়ায় বলে অভিযোগ। সম্প্রতি গুয়াহাটি হাই কোর্ট মেইতেইদের তপসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছে। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেখান থেকেই সংঘাতের সূচনা।
মেইতেইরা মণিপুরের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। মূলত সমতল এলাকার বাসিন্দা। অন্য দিকে, কুকি, অঙ্গামি, লুসাই, নাগা, থাড়োয়াসের মতো প্রায় ৩০টি জনজাতি গোষ্ঠীর বাস পাহাড়ি এলাকায়। পাহাড়ের এই জনজাতিদের আশঙ্কা, জনজাতির মর্যাদা পেলেই পাহাড়ি এলাকার জমিতে হাত বাড়াবে মেইতেইরা। এখন জনজাতির মর্যাদা না পাওয়ায় তারা ওই জমি কিনতে পারে না।
অন্য দিকে, মেইতেইদের দাবি, ১৯৪৯ সালে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মণিপুর সংযুক্ত হওয়ার আগে তাঁরা জনজাতি হিসাবে গণ্য হতেন। কিন্তু সংযুক্তিকরণের পর সেই মর্যাদা হারান তাঁরা। ফলে জনজাতি জমির অধিকার, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাংবিধানিক রক্ষাকবচও হারিয়েছেন। যে কারণে আজ নিজভূমেই কোণঠাসা তাঁরা। ১৯৫২ সালে মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ যেখানে মেইতেই ছিল, ২০১১ সালের তা ৪৪ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। মণিপুরের হিংসা রুখতে রাস্তায় নামানো হয়েছে আধা সেনা এবং অসম রাইফেলসকে। মণিপুরের ঘটনায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্রও। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের সঙ্গে দফায় দফায় পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মণিপুরের হিংসার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।