নয়াদিল্লি: সব ভালোর শেষ আছে। কিছু কিছু শেষ যদিও মেনে নেওয়া সহজ হয় না। বিরাট কোহলির টেস্ট অবসরের ঘোষণায় সেই আবেগের লাভাস্রোত ভারত তথা বিশ্ব ক্রিকেটে। লাল বলের ফর্ম্যাটকে গুডবাই জানানোর ইচ্ছের কথা সামনে আসার পর প্রমাদ গুনেছিলেন অনেকে। তবু একটা ক্ষীণ আশা ছিল, বোঝানোর চেষ্টা চলছে, যদি রাজি হয়ে যান বিরাট।
ব্রায়ান লারা সহ একঝাঁক কিংবদন্তি আবেদন জানিয়েছিলেন, ‘বিরাট তোমাকে দরকার টেস্ট ক্রিকেটে।’ কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত থেকে টলানো যায়নি কিং কোহলিকে। সোমবার সকাল এগারোটা পঁয়তাল্লিশ নাগাদ ইনস্টাগ্রাম পোস্টে টেস্ট অবসরের কথা ঘোষণা করেন। জানান, সরে দাঁড়ানো সহজ ছিল না। বিরাটের ঘোষণার পর আবেগের বহিঃপ্রকাশ ক্রিকেট বিশ্বে।
ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড লিখেছে, একটা যুগের অবসান। বিরাট-অবসরের ঢেউ ফিফাতেও। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থাটির মতে, দুর্দান্ত কেরিয়ারে ইতি পড়ল। আইসিসি লিখেছে, সাদা পোশাকের ফর্ম্যাটে বিরাট থামলেও তার মুকুট অটুট থাকবে চিরকাল। টেস্টকে বিদায় জানালেও রেখে গেলেন তুলনাহীন একটা পরম্পরা। ছোট্ট পোস্টে হরভজন সিংয়ের বিরাট প্রশ্ন- কেন অবসর নিচ্ছ?
প্রাক্তন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী ভাবতেই পারছেন না এরকম কিছু অপেক্ষা করছিল। বিরাটের সঙ্গে জুটি বেঁধে টেস্টে অনেক স্মরণীয় সাফল্যের জয়গাথা তৈরি করা শাস্ত্রী বলেছেন, ‘বিশ্বাসই হচ্ছে না, তোমার কাজ শেষ। আধুনিক ক্রিকেটে তুমি একজন দৈত্য। খেলোয়াড়, অধিনায়ক হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটের যথার্থ দূত। লাল বলের ফর্ম্যাটে ক্রিকেটপ্রেমীদের, বিশেষত আমাকে সুন্দর সব মুহূর্ত উপহার দিয়েছ, তার জন্য ধন্যবাদ।’
বিরাটের টেস্ট অবসরের পিছনে গৌতম গম্ভীরের হাত দেখছেন অনেকে। আগামীর ভাবনায় তারুণ্যে জোর। হেড কোচের যে ভাবনার প্রতিফলন রোহিত শর্মার পর বিরাটের বিদায়। সূত্রের খবর, রবীন্দ্র জাদেজা, মহম্মদ সামিদের মতো সিনিয়াররাও বিরাট-রোহিতদের পথে হাঁটতে বাধ্য হবেন। সেই গম্ভীরের প্রতিক্রিয়াও রীতিমতো চর্চায়। দিল্লি রনজি ট্রফির টিম থেকে টিম ইন্ডিয়ায় বিরাটের সঙ্গে খেলা গম্ভীর লিখেছেন, ‘সিংহ-হৃদয়। তোমাকে মিস করব চিকস।’
২০১১ সালের ২০ জানুয়ারি কিংস্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্ট। ১৪ বছরের বর্ণময় কেরিয়ারে শেষ টেস্ট গত অস্ট্রেলিয়া সফরে সিডনিতে। ১২৩ ম্যাচে ৯২৩০ রান। ৩০টি শতরান। এর মধ্যে ৬৮টি টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ৪০টিতে জয়ের কৃতিত্ব। এদিন যে কেরিয়ারে বিরাটের ইতি টেনে দেওয়ার রেশ স্বভাবতই ক্রিকেটমহলে।
শচীন তেন্ডুলকার : তোমার টেস্ট অবসরের দিনে আজ ১২ বছর আগে আমার বিদায়-মুহূর্তের কথা মনে পড়ছে। সেদিন তুমি তোমার প্রয়াত বাবার মূল্যবান একটা জিনিস আমাকে উপহার দিতে চেয়েছিলে। তোমার যে আচরণ মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। তোমার টেস্ট আবেগ, আত্মত্যাগ বাকিদের কাছে অনুপ্রেরণা। অসাধারণ টেস্ট কেরিয়ার। রান, পরিসংখ্যান ছাপিয়ে তুমি ভারতীয় ক্রিকেটকে দুই হাত ভরে উপহার দিয়েছ। অভিনন্দন স্পেশাল টেস্ট কেরিয়ারের জন্য।
বীরেন্দ্র শেহবাগ : প্রথম দর্শনেই বুঝেছিলাম, তুমি বিশেষ প্রতিভা। টেস্ট ক্রিকেটে তুমি যে আবেগ যোগ করেছিলে তা প্রত্যক্ষ করা আমাদের কাছে উপভোগ্য ছিল। টেস্ট ক্রিকেটের যথাযথ দূত। আগামীর জন্য অনেক শুভেচ্ছা।
জয় শা : টি২০ ফর্ম্যাটের রমরমার যুগেও টেস্টে তোমার শৃঙ্খলা, ফিটনেস এবং দায়বদ্ধতা বাকিদের কাছে উদাহরণস্বরূপ। হৃদয় দিয়ে সবসময় টেস্ট খেলেছ। অভিনন্দন দুর্দান্ত কেরিয়ারের জন্য।
ঋষভ পন্থ : তাগিদ, আবেগ, যুদ্ধ। প্রতি মুহূর্তে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছ। আগামীর জন্য অনেক শুভেচ্ছা বিরাটভাই।
এবি ডিভিলিয়ার্স : মহাকাব্যিক টেস্ট কেরিয়ারের জন্য অভিনন্দন। তোমার দৃঢ়তা, দক্ষতা বরাবর অনুপ্রাণিত করেছে আমাকে। যথার্থ অর্থে কিংবদন্তি।
ইরফান পাঠান : অধিনায়ক হিসেবে তুমি শুধু ম্যাচ জেতনি, সবার মানসিকতা বদলে দিয়েছ। ফিটনেস, আগ্রাসন ও গর্বের মেলবন্ধনে সাদা পোশাকের ফর্ম্যাটে নতুন বেঞ্চমার্ক তৈরি করেছ। যথার্থ অর্থে আধুনিক ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের তুমি মশালবাহক।
চেতেশ্বর পূজারা : দুর্দান্ত এবং গর্বের টেস্ট কেরিয়ারের জন্য অভিনন্দন বিরাট। টেস্টের প্রতি তোমার ভালোবাসা অনুপ্রেরণা। তোমার সঙ্গে বছরের পর বছর খেলা আমার কাছে সম্মানের।
যুবরাজ সিং : লড়াই, অসম্ভব খিদে, হৃদয় দিয়ে খেলা- প্রতিটি পদক্ষেপে গর্বিত করেছ। সাদা পোশাকের ফর্ম্যাটে তুমি যা অর্জন করেছ, তা গর্বের। ভালো থেকো কিং কোহলি।
মুশফিকুর রহিম : কুর্নিশ জানাই দুই কিংবদন্তিকে (রোহিত ও বিরাট)। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ওদের অবদান লাখো মানুষকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।