শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: মোরাঘাট চা বাগানের (Moraghat Tea Garden) গিরগিটিয়া লাইন থেকে একেবারে মুম্বইয়ের ভাবা পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্র (Bhabha Atomic Research Centre)। শুনতে কিছুটা আশ্চর্যের মনে হলেও পারমাণবিক গবেষণার ক্ষেত্রে দেশের কুলিন ওই সংস্থাটিতে সায়েন্টিফিক অফিসার হয়ে এমনই তাকলাগানো নজির সৃষ্টি করেছেন জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) বানারহাটের (Banarhat) মোরাঘাট চা বাগানের বাসিন্দা বিশাল শা নামে এক তরুণ। তাঁর ওই কৃতিত্বে এখন উচ্ছ্বাসে ভাসছে গোটা এলাকা। যদিও নিজের স্বপ্নের গন্তব্যে পৌঁছোনোর যাত্রাপথ আদৌ মসৃণ ছিল না অভাবী পরিবারের ওই ছাত্রের। এই খবরে খুশি প্রশাসনের কর্তারাও। বানারহাটের বিডিও নিরঞ্জন বর্মন বলেন, ‘ওই তরুণ পড়াশোনাকেই ধ্যানজ্ঞান করে যেভাবে সফলতা ছিনিয়ে এনেছেন, তা অন্য ছাত্রছাত্রীদেরও প্রেরণা জোগাবে বলেই মনে করি।’
বিশালের বাবা রাজকুমার শা বাগানেই একটি ছোট মুদি দোকান চালান। মা মুন কুমারী শা এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলের পার্শ্বশিক্ষিকা। বিশাল পড়াশোনা করেছেন বানারহাটের আদর্শ বিদ্যামন্দিরে। সরকারি ওই স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর জয়েন্ট এন্ট্রার্সে (মেইন্স) উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ভোপালে চলে যান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। এরপর চলতি বছরে কানপুর আইআইটি থেকে ‘এমটেক’ শেষ করেন। এবছরই ‘গেট’-এ উত্তীর্ণ হয়ে মুম্বইয়ের ভাবা পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্রে বিজ্ঞানী পদের জন্য আবেদন করেন তিনি। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করার পর সেখানে যোগ দেওয়ার ছাড়পত্র মেলে।
বিশালের কথায়, ‘লক্ষ্যে স্থির থাকলে সবকিছুই সম্ভব। আমার জীবনের একমাত্র ব্রত ছিল বিজ্ঞানী হওয়া। আরও এগোতে চাই।’ ওই তরুণের বাবা রাজকুমার শা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি ছেলের অদম্য আগ্রহ। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পড়িয়েছি। আজ আমারও স্বপ্ন পূরণ হল।’ চোখে জল মা মুন কুমারীর। তিনি বলেন, ‘পরিশ্রম ও নিষ্ঠাই ছেলের সাফল্যের মূল কারণ।’
সোমবার রাতে মুম্বই থেকে ফেরার পর বিন্নাগুড়ি স্টেশনে নামতেই সংবর্ধনার জোয়ারে ভাসতে থাকেন বিশাল। যা অব্যাহত ছিল মঙ্গলবারও। মোরাঘাট টিজি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিআইসি বিজয় প্রসাদ বলেন, ‘চা বাগানের ছাত্রছাত্রীদের কাছে বিশাল এখন আইকন। চেষ্টা থাকলেই যে উপায় হয়, তা ফের প্রমাণ হল বিশালের মাধ্যমে।’ এলাকার বাসিন্দা তথা ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক শম্ভু ছেত্রী বলেন, ‘মোরাঘাট চা বাগান পরমাণু বিজ্ঞানী পেল। এর চেয়ে গর্বের আর কিছু হতে পারে না।’