Chaa Sundari Scheme | চা সুন্দরীর ঘরে ভোটের অঙ্ক

শেষ আপডেট:

সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি: ভোটারদের চোখে প্রায় এক বছর দেরি থাকলেও ভোট ম্যানেজারদের তৎপরতায় আগামী বিধানসভা ভোটের সলতে পাকানো পুরোদমে শুরু হয়েছে। গত পাঁচ-ছয় বছরে ডুয়ার্সের চা বলয়ে গড়ে ওঠা বিরোধীদের দুর্গ ভাঙতে মরিয়া রাজ্যের শাসকদল৷ চা সুন্দরী নামে আবাস প্রকল্প (Chaa Sundari Scheme) বিরোধীদের ভোটব্যাংকে হানা দিতে মোক্ষম অস্ত্র বলেই মনে করছেন শাসকদলের নেতারা। ২০২০ সালের রাজ্য বাজেটে ঘোষিত এই প্রকল্পে গড়ে তোলা ঘরগুলি শ্রমিকদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শাসক নেতারা চা সুন্দরীকে তুরুপের তাস ভাবলেও বাস্তবে তা নিয়ে মতান্তরের অভাব নেই। মুখ্যমন্ত্রীর সাধের প্রকল্পের পাকা ঘরে চা শ্রমিকরা আদৌ আগ্রহী কি না, তাও স্পষ্ট নয়।

সারারাজ্যে আবাস যোজনায় ঘর গড়তে আবাস পিছু ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হলেও প্রায় সমান মাপের চা সুন্দরীর ঘর গড়তে ৫ লাখ ৪৩ হাজার থেকে ৬ লাখ ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত দরাজ হাতে বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। তারপরেও সিমেন্ট, ইট, রড সহ চা সুন্দরীর ঘর গড়তে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রীর মান নিয়ে শুরু থেকেই ছিল হাজারো অভিযোগ। তবে, প্রকল্পে সাপ্লায়ার হিসেবে থাকা শাসকদলের নেতা এবং সক্রিয় প্রভাবশালীদের পাহারায় প্রায় নির্বিঘ্নেই কাজ শেষ করেছে কলকাতা সহ রাজ্যের বড় নির্মাণ সংস্থাগুলি৷ ফাওলই প্রাপকদের হিসেবে তৈরি প্রাপক তালিকা থেকে শুরু হয়েছে ঘর বিলির কাজ। আলিপুরদুয়ার জেলার তোর্ষা, লঙ্কাপাড়া চা বাগানে ইতিমধ্যেই ঘরের চাবি তুলে দেওয়া হয়েছে চা শ্রমিকদের হাতে। তবে সেই ঘরে শ্রমিকরাই থাকছেন, এমনটা বাস্তবে একদমই না। এনিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলে বিজেপির চা শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি সাংসদ মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘রাজ্যের শাসকদলের মদতে আগামীদিনে চা সুন্দরীর আবাস হয়ে উঠবে রোহিঙ্গা সহ অনুপ্রবেশকারীদের মুক্তাঞ্চল৷ চা শ্রমিকরা এই প্রকল্প থেকে কোনও লাভই পাননি এবং পাবেনও না। তাই ভোটে প্রভাব পড়লে তা তৃণমূলের পক্ষে নেতিবাচকই হবে।’

এখনও পর্যন্ত দুই জেলা মিলিয়ে চা সুন্দরীর ৩৬৯৪টি ঘরের মধ্যে আলিপুরদুয়ার জেলায় ২৬৪১টি এবং জলপাইগুড়ি জেলায় ১০৫৩টি ঘর তৈরি হয়েছে। এরমধ্যে একাংশ যেমন শ্রমিকদের হাতে চলে গিয়েছে তেমনই জলপাইগুড়ি জেলায় রেডব্যাংক চা বাগানে ৫৬২টি ঘরের সঙ্গে পার্ক মিলিয়ে বিশাল চা সুন্দরী কলোনি খাঁখাঁ করছে শ্রমিকদের অপেক্ষায়। বাগানের ভিকালাইন, আপারলাইন, শালবনির মতো শ্রমিক মহল্লাগুলোয় চা সুন্দরীর ঘরে যাওয়ার জন্যে গুঞ্জন কান পাতলেই শোনা যায়। সর্বশেষ হিসেবে প্রায় ৯০০ শ্রমিকের মধ্যে কারা আবাসনে যাবেন এবং কারা ঘর পাচ্ছেন না তা নিয়েও নানা মত বাগানের অলিগলিতে। চা সুন্দরীর ঘরে সপরিবারে যাওয়ার ভাবনা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রেডব্যাংক চা বাগানের আপার লাইনের এক শ্রমিকের কথায়, যারা ভিনরাজ্যে কাজ করে ভালো রোজগার করছে তারা নিজেদের বাড়ি ইচ্ছেমতো বানিয়ে নিয়েছে। অনেকে টাইলস বসানো বাড়িতে সবজি আর ফুলের বাগান করেছে। এরা ঘর পেলেও নিজেরা না থেকে ভাড়া দেবে। আমার মতো যাদের বাড়িতে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, সুপারি, নারকেল গাছ আছে তারাও ওই ঘুপচি কলোনিতে যেতে খুব ইচ্ছুক নয়। দুধ, ডিম, সুপারি বেচে আমাদের কিছু হলেও আয় হয় যা ওখানে সম্ভব নয়।

চা বাগানে ঢুঁ দিলেই বোঝা যায়, গাছপালায় ভরা খোলামেলা পরিবেশে থেকে অভ্যস্ত আদিবাসী বা গোর্খা জনজাতির মানুষের মধ্যে চা সুন্দরীর ঘরের চাবি পাওয়া নিয়ে আগ্রহ থাকলেও সেখানে বসবাস নিয়ে দ্বিধা অনেক। শাসকদলের নেতারা অবশ্য সব অভিযোগ এবং বিতর্কের ঊর্ধ্বে চা সুন্দরীতে ভোট অঙ্কের ফায়দাই দেখছেন। তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নকুল সোনার বলেন, ‘২০১১ সালের আগে পর্যন্ত চা বাগানে জমিদারি ব্যবস্থা চলত। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীই চা শ্রমিকদের নাগরিক সম্মান সহ সমস্ত পরিষেবা দিয়েছেন। চা সুন্দরী হল শ্রমিক পরিবারের জীবনযাপনের উন্নতিতে রাজ্য সরকারের এক যুগান্তকারী এবং ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এনিয়ে বিরোধীদের সমস্ত কুৎসার জবাব শ্রমিকরা গণতান্ত্রিকভাবেই দেবে।’

Shahini Bhadra
Shahini Bhadrahttps://uttarbangasambad.com/
Shahini Bhadra is working as Trainee Sub Editor. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Online. Shahini is involved in Copy Editing, Uploading in website.

More like this
Related

Bolder export | সোমবার থেকে ফুলবাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে যাবে না ভুটানের ট্রাক, হুঁশিয়ারি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের    

ফুলবাড়িঃ সোমবার থেকে ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে...

Heroin smuggling | শিলিগুড়ি হয়ে হেরোইন কারবার নেপাল-ভুটানে, নজরে পাব-বার

শিলিগুড়িঃ শিলিগুড়িকে ট্রানজিট পয়েন্ট করে হেরোইন যাচ্ছে ভুটান, নেপালেও!...

Darjeeling | বোর্ড পুনর্গঠন হয়নি, উন্নয়ন থমকে পাহাড়ে

রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: ২০১৪ সালে রাজ্য সরকার দার্জিলিং পাহাড়ে...