বীরপাড়া: বীরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ২১ জন চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর (হায়ারড জিডিএ) ২৬ মাসের পারিশ্রমিকের টাকা বকেয়া। বকেয়া আদায়ে সোমবার থেকে ফের কর্মবিরতি শুরু করেছেন ওঁরা। বকেয়া ইস্যুতে এবছরেই ১৮ এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি কর্মবিরতি করেন তাঁরা। ১৯ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল সুপার কৌশিক গড়াইকে দিনভর অফিসেই আটকে রাখেন। ৫ মার্চ হাসপাতালে বৈঠক করতে গিয়ে ওঁদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী বুলু চিকবড়াইক। সেদিন বুলু প্রতিশ্রুতি দেন, বকেয়া টাকা ধাপে ধাপে মেটানো হবে। তবে প্রাপ্য টাকা আজও পাননি তাঁরা।
ওই কর্মীদের মধ্যে অমল রায় সোমবার বলেন, ‘নিরুপায় হয়েই ফের কর্মবিরতি শুরু করলাম। টাকা না পাওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। বৈঠক করে প্রতিশ্রুতি দিলেও ওরা টাকা দিল না। আমাদের সংসার চলবে কী করে?’ আরেক কর্মী আজাবুল আলির মন্তব্য, ‘নামমাত্র টাকায় দিনভর কাজ করিয়ে নেওয়া হয়। অথচ দু’বছরেরও বেশি বকেয়া পাওনা।’ ওই কর্মীরা ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ চুক্তির ভিত্তিতে দৈনিক ১৫০ টাকার বিনিময়ে কাজ করেন। জরুরি বিভাগে রোগীদের শুশ্রূষা করা থেকে শুরু করে অপারেশন থিয়েটারেও চিকিৎসকদের সহযোগিতা করতে হয় তাঁদের।
এর আগে কর্মবিরতির জেরে হাসপাতালে পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছিল। অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করা হয়েছিল। জরুরি বিভাগেও ভর্তি নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছিল। সোমবার অবশ্য অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করা হয়নি। রোগী ভর্তি নিয়ন্ত্রণের কথাও অফিশিয়ালি ঘোষণা করা হয়নি। অবশ্য হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, খুব প্রয়োজন না হলে কাউকে ভর্তি করা হচ্ছে না। ওই কর্মীরা টানা কর্মবিরতি করলে পরিষেবা যে মুখ থুবড়ে পড়বে তা নিয়ে নিশ্চিত হাসপাতালের অন্য কর্মীরাও।
বীরপাড়া হাসপাতালের ওপর মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকের ১৯টি চা বাগান, ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও ধূপগুড়ি, বানারহাট এবং ফালাকাটা ব্লকের একাংশের বাসিন্দারা নির্ভরশীল। অথচ স্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মী রয়েছেন মাত্র পাঁচজন। তাই ভরসা অস্থায়ীরা। বকেয়া আদায়ে কর্মবিরতি এবারই প্রথম নয়। বিগত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার কর্মবিরতি পালন করেছেন ওঁরা।
এর আগে বকেয়া ইস্যুতে হাসপাতালে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেন মন্ত্রী বুলু চিকবড়াইক। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই ২১ জনের মধ্যে ছয়জনকে নিয়মিত চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে নিয়োগের চিন্তাভাবনা করে দীর্ঘদিন আগে অর্থ দপ্তরে ফাইল পাঠানো হয়েছে। এদিকে চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ীদের দাবি, মাত্র ছয়জনকে নয়, প্রত্যেককেই নিয়মিত কর্মী হিসেবে নিয়োগ করতে হবে। তার আগে বকেয়া মেটাতে হবে। এদিকে মন্ত্রী বুলু কর্মবিরতির খবর জানেনই না। হাসপাতাল সুপার কৌশিক গড়াই এবং জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় ফোন রিসিভ না করলেও মন্ত্রী বুলু সোমবার রাত পৌনে ৮টায় বলেন, ‘কর্মবিরতির খবর আমাকে কেউ জানাননি। খোঁজ নিচ্ছি।’ বকেয়া টাকা মেটাতে আদৌ কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছে কি না সে প্রশ্নের জবাব দেননি মন্ত্রী